‘আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধি বলে, স্পিডব্রেকার দুর্ঘটনা থেকে বাঁচায় ৷ তাই কোনও বিপদ থেকে যদি আমি বাঁচাতে পারি, তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে কি?’ লোকসভা ভোটের প্রচারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বারবার, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পিড ব্রেকার বলে কটাক্ষ করেছিলেন তখন পাল্টা হিসেবে ঠিক এই জবাবই দিয়েছিলেন তিনি। শুধু মুখেই নয়, কাজেও মোদীকে মোক্ষম জবাব দিয়েছেন মমতা। কারণ দিন কয়েক আগে খোদ মোদী সরকারই ‘স্পিড ব্রেকার দিদি’র সরকারের নির্মল বাংলা প্রকল্পকে সার্টিফিকেট দিয়েছে। শুধু তাই নয়। কেন্দ্র জানিয়েছে, এই প্রকল্পের সুবাদেই গ্রামবাংলার মানুষকে এখন আর মলমূত্র ত্যাগ করতে মাঠে-ময়দানে যেতে হয় না। সকলের জন্যই বাড়িতে শৌচাগারের ব্যবস্থা করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
প্রসঙ্গত, মমতার স্বপ্নের কন্যাশ্রী, উৎকর্ষ বাংলা, সবুজ সাথীর মতো প্রকল্প আর্ন্তজাতিক মঞ্চে বিপুল প্রশংসা পেয়েছে। কন্যাশ্রী ও উৎকর্ষ বাংলা জিতে নিয়েছে খোদ রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিও। আর তার ফলেই মমতা সরকারের এই সব প্রকল্পের সাফল্যকে ঘিরে চরম ধর্মসঙ্কটে পড়েছে রাজ্য বিজেপি। অবস্থা এমনই যে দলের অন্দরে বিজেপির একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাদের সরকারই বলছে, তৃণমূল সরকার ভালো কাজ করছে। নানা প্রকল্পকে সেরার শিরোপা দিচ্ছে। কোন মুখে আমরা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলব? কীভাবে আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্পিড ব্রেকার দিদি বলে কটাক্ষ করতে পারি?’ জানা গেছে, বিষয়টি ৬ মুরলীধর সেন লেনের কর্তাদের কাছে এতটাই অস্বস্তির যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাফল্যকে আড়াল করতে কোনও কোনও নেতা স্বীকৃতি-সম্মান দেওয়ার মানদণ্ডই বদলে দেওয়ার দাবি করেছেন।
সেই প্রস্তাবেও দল ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না। কারণ, বিজেপি নয় নয় করে এক ডজনের বেশি রাজ্যে একক শক্তিতে ক্ষমতায়। জোট সরকার ধরলে প্রায় দেড় ডজন রাজ্যে ক্ষমতায় তারা। কেন্দ্রের একই মাপকাঠিতে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিজেপি সরকার সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বভাবতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের সরকারকে আক্রমণের কৌশল নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বিজেপির নেতাদের। যেটা স্পষ্ট বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কথায়। তিনি বলছেন, ‘আমরা চাই, রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান কেন্দ্রীয় সরকার খতিয়ে দেখুক।’ জবাবে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, ‘ওরা অফিসার পাঠিয়ে যত বার ইচ্ছা খতিয়ে দেখুক। কোনও আপত্তি নেই।’
জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের মুল্যায়ণ করে, এমন একটি সর্বভারতীয় সংস্থা বাংলার প্রায় দু’ডজন প্রকল্পকে ভারত সেরার শিরোপা দিয়েছে। তার মধ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই সরকারি হাসপাতালে সস্তায় ওষুধ দেওয়ার প্রকল্প, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালুর নীতি দেশের সব রাজ্যকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যানই বলছে, সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তৃণমূল সরকারই দেশের মধ্যে নজির স্থাপন করেছে। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপকের সংখ্যা বলছে, এই রাজ্যের প্রায় ৯ কোটি মানুষ কোনও না কোনও প্রকল্পের সূত্রে সরাসরি সরকারের ভর্তুকি পাচ্ছেন।
রাজ্য বিজেপির চিন্তন বৈঠকেও এই নিয়ে অস্বস্তি বেড়ে গিয়েছে। শনি ও রবিবার, দু’দিন দুর্গাপুরে রাজ্য বিজেপির চিন্তন বৈঠক হয়েছে। সেখানে অন্যতম আলোচ্য ছিল, ২০২১-এ রাজ্য বিধানসভা ভোটে দলের কৌশল। কিন্তু দল কোন পথে অন্দোলন করবে, তা নিয়ে এখন সব চেয়ে বেশি ভাবতে হচ্ছে দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়দের। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের এক সাধারণ সম্পাদক চিন্তন বৈঠকে বলেছেন, ‘আমাদের দিল্লীর সরকার বাংলার সরকারকে এত সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তা হলে আমরা কী ভাবে এই সরকারকে ব্যর্থ বলব?’ তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে সরব হন একাধিক নেতা। অস্বস্তি এড়াতে সকলেরই এক বক্তব্য, রাজ্যকে দেওয়া সাফল্যের স্বীকৃতি পুর্নমুল্যায়ন করা উচিত।