প্রথম দিন থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ‘দিদিকে বলো’। তাঁকে সরাসরি ফোন করে নিজেদের মনের কথা জানানোর জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাতে রাজ্যবাসী আপ্লুত।
আগেই জানানো হয়েছিল, ‘দিদিকে বলো’ প্রচার কর্মসূচীতে নির্বাচিত বিধায়কেরা প্রতিদিনই নিজের এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের কথা শুনবেন। সারাদিন মানুষের সঙ্গে কাটিয়ে রাতে থাকবেন দলীয় কর্মীদের বাড়িতেই। এভাবে ১০০ দিনের মধ্যে বাংলার ১০ হাজার গ্রামে ঘুরবেন তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সেইমতোই ‘দিদিকে বলো’র প্রথম পর্বে নেতাদের গ্রাম-সফরের সচিত্র তথ্য পৌঁছে গিয়েছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে। বিপুল উৎসাহে মন্ত্রী-বিধায়কদের বড় অংশ ২ থেকে ৫ তারিখ পর্যন্ত বহু গ্রাম চষেছেন। জনসংযোগে বেরিয়ে কে কতটা গা ঘামালেন, এবার তার রিপোর্ট তৈরি করছে দল।
দলীয় সূত্রের খবর, গত দু’দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে জনসংযোগের ছবি পাঠিয়েছেন বিধায়করা। কোন গ্রামে, কাদের বাড়ি গিয়ে দেখা করাটা অগ্রাধিকার, তাও বলে দিয়েছিল দল। সরাসরি রাজনীতি করেন না, কিন্তু গ্রামে মান্যগণ্য ব্যক্তি- এমন পাঁচ জনের সঙ্গে মজলিশ বসানোর নির্দেশ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা কেমন হল, তা জানতে গত দু’দিনে প্রশান্ত কিশোরের টিমের তরফ থেকে ঘন ঘন যোগাযোগ করা হয়েছে বিধায়কদের সঙ্গে। তাগাদায় কাজও হয়েছে যথেষ্ট। স্মার্ট ফোনে সড়গড় নন, এমন নেতাদের ছবি পাঠানোর ব্যাপারে সহযোগিতা করছেন টিম-পিকে। উৎসাহ জোগানো হচ্ছে বিধানসভা-ভিত্তিক ফেসবুক পেজ খোলার বিষয়েও।
এক মন্ত্রীর কথায়, ‘ভোটের পর আমাদের অনেকে তো বহু জায়গায় সাধারণ মানুষকে ফেস করতেই কুণ্ঠাবোধ করছিলাম। দলের এই রাত্রিবাসের টোটকায় সেই সংশয়ের বেড়া-টা আমরা ডিঙোতে পেরেছি। এই তো সবে শুরু। আমারও সামান্য সংশয় ছিল, কিন্তু রাতে কর্মীদের বাড়িতে থেকে দেখলাম আসল বাধাটা মগজে।’ আবার গ্রামাঞ্চল থেকে জিতে মন্ত্রী হওয়া এক হেভিওয়েট তৃণমূল নেতার বক্তব্য, ‘জীবনে অনেক গ্রামে ঘুরেছি। কিন্তু নিজের বিধানসভায় ব্লকস্তরের কর্মীর বাড়িতে ভোররাত পর্যন্ত আড্ডা মেরে যে কত কথা জানা যায়, সে অভিজ্ঞতা ছিল না। এক প্রকার অ্যাডভেঞ্চার করে এলাম।’
বিধায়কদের জনসংযোগের সচিত্র তথ্য দলের দেওয়া নির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে চেয়ে পাঠানোর কারণ কী? তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়করা বলছেন, আইডিয়াটা কেমন কাজে এল সেটা নিশ্চয়ই পরখ করে দেখছে দল। কত মানুষের কাছে পৌঁছনো গেল, দলে তার আন্দাজ পাওয়া যাবে আমাদের পাঠানো ছবি থেকেই। যাঁরা প্রথম দফায় কোনও গ্রামে বিশেষ সময় দিতে পারেননি, তাঁদের কাছেও সমস্যার কথা জানতে চাইবে দল। যেখানে সংঘাতের ঝুঁকি আছে, সেখানে ভাবা হতে পারে অন্য পন্থাও। তবে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই অভূতপূর্ব সাড়া মিলছে এতে। সব মিলিয়ে গোটা ঘাসফুল শিবির এখন দিনভর ব্যস্ত। লক্ষ্য একটাই- আরও সফল করতে হবে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচীকে।