ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাঁধে পর্তুগালের বোঝা। আর সে বোঝা রাশিয়া বিশ্বকাপে অক্লেশে বহন করে চলেছেন রোনালদো। লিওনেল মেসি, নেইমার, টমাস মুলাররা যখন ফ্লপ, তখন রিয়াল মাদ্রিদের সেরা ফর্মের রোনালদোকেই দেখা যাচ্ছে বিশ্বকাপে।
প্রথম ম্যাচে তার হ্যাটট্রিকেই অন্যতম ফেভারিট স্পেনের সঙ্গে ড্র করেছিল পর্তুগাল। বুধবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মরক্কোকে ১-০ গোলে হারাল ২০১৬ ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। গোলদাতা রোনালদো। দুই ম্যাচে পর্তুগালের চারটি গোলই এল এই দুর্দান্ত গোলমেশিনের পা থেকে। যেভাবে এগিয়ে চলেছেন তাতে সর্বাধিক গোলদাতার পুরস্কার ‘গোল্ডেন বুটের’ দিকে হাত বাড়িয়েই দিয়েছেন পর্তুগাল অধিনায়ক। এই জয়ে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল পর্তুগাল। ২৫ জুন গ্রুপে তাদের শেষ ম্যাচ ইরানের বিপক্ষে। ওদিকে দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় নিল মরক্কো।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে রোনালদোকে নিয়ে উন্মাদনা কি একটু কমই ছিল না? মেসি বা নেইমাররের চেয়ে আলোচনায় ঢের পিছিয়ে ছিলেন তিনি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানির মতো পর্তুগালের বিশ্বকাপ ঐতিহ্য নেই। কিন্তু তারা যে ২০১৬ এর ইউরোতে স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন সেটা কি ভুলে গেলে চলে? ফুটবলবোদ্ধা, বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য ফেভারিটদের তালিকায় পর্তুগালকে রাখেননি। এখন বোধহয় তাদের নতুন করে হিসাব করতে হবে। কারণ রোনালদো যে এবারের আসরে নিজকে ও দলকে উজাড় করে দিতেই রাশিয়া এসেছেন।
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল। যাতে এক হিসাবে এটি ছিল বিশ্বকাপে মরক্কোর বিপক্ষে পর্তুগালের প্রতিশোধের ম্যাচ। কারণ ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে ১-৩ গোলে হারতে হয়েছিল পর্তুগালকে। প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি পরের ধাপেও পা বাড়িয়েছেন কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের দল। খেলার শুরুতেই রোনালদো ম্যাজিক। ৪ মিনিটে কর্নার কিক আদায় করে নেয় পর্তুগাল। বার্নারদো সিলভা কর্নার কিক থেকে ছোট্ট করে বল ঠেলে দেন হোয়াও মতিনহোকে। তার ক্রস থেকে উড়ে আসা বল মাপা হেডে জালে জড়িয়ে দেন রোনালদো। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত দ্রুততম দুটি গোলই রোনালদোর। স্পেনের বিপক্ষে গোল করেছিলেন ৩ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে, মরক্কোর বিপক্ষে করলেন ৩ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে। তবে ইরানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে আত্মঘাতী গোলে হারা মরক্কো প্রথমার্ধে খেলেছে সমানে সমানে। বল দখলের লড়াইয়ে দুই দল ছিল সমানে সমান। পর্তুগাল আক্রমণে গেলে সেই বল কেড়ে নিয়ে মরক্কো আক্রমণে উঠেছে দ্রুতগতিতে। যাতে দুর্দান্ত এক ম্যাচই উপভোগ করেছেন দর্শকরা। প্রথমার্ধে এক গোলেই এগিয়ে ছিল পর্তুগাল।
আত্মঘাতী গোলে ইরানের বিপক্ষে ০-১ গোলে হেরেছিল মরক্কো। বিশ্বকাপে এবার যেন দুর্ভাগ্যই পিছু নিয়েছে দলটির। দুই ম্যাচেই তুলনামূলক ভালো খেলেও হেরে যেতে হলো তাদের। আসলে এই ম্যাচে মাঠের পুরোটা দাপিয়ে কিন্তু খেলেছে মরক্কোই। এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে পর্তুগিজদের ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। কিন্তু একজন স্ট্রাইকারের অভাবে ভেজাচোখ নিয়েই তাদের মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ফিনিশার ছিল না মরক্কোর। ভালো খেলেও তাই গোলের দেখা পায়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় খেলা হয়েছে পর্তুগালের হাফ সীমানায়। কিন্তু সেখানে গিয়েই মরক্কোর আক্রমণগুলো খেই হারিয়ে ফেলছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের আক্রমণে অনেক এগিয়ে থাকা মরক্কো ৫৭ মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল। ফ্রি-কিক থেকে মিডফিল্ডার ইউনেস বেলহান্দার হেড ঝাঁপিয়ে এক হাতে ঠেকান পর্তুগাল গোলরক্ষক রুই পাত্রিসিও। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে মেহদি বেনাতিয়ার ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। গোলের বেশ কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করা মরক্কো অধিনায়ক বেনাতিয়া যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ডি-বক্স থেকে ক্রসবারের ওপর দিয়ে শট নেন। পায়ে বল বেশি রেখেছে মরক্কো। সুযোগও তৈরি করেছে বেশি, লক্ষ্যে শটও তাদের বেশি। তবুও বাঁচা-মরার ম্যাচে পর্তুগালের সঙ্গে পেরে ওঠেনি আফ্রিকার দলটি। ব্যবধান গড়ে দিলেন রোনালদো।