দিন দুয়েক আগেই জানা গিয়েছিল, রেলে ৩০ বছর ধরে চাকরি করছেন অথবা তাঁর ৫৫ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে— এমন কর্মীদের ছেঁটে দিতে উদ্যোগী হয়েছে মোদী সরকার। যার ফলে মোট ৩ লক্ষ কর্মী কাজ হারাবেন। তবে সূত্রের খবর, শুধু রেলই নয়, সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাকেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবার যার কবলে পড়তে চলেছে বিএসএনএল এবং এমটিএনএল।
প্রসঙ্গত, দুই সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-এর আর্থিক দুর্দশা এখন চরমে। কেন্দ্রীয় সরকার এই দুই সংস্থার কয়েক হাজার কোটির টাকা লোকসানের বোঝা বইতে নারাজ। তাই দুই সংস্থার কর্মীদের ওপর নেমে আসছে স্বেচ্ছা অবসরের কোপ। কেন্দ্র ঠিক করেছে, এই দুই সংস্থার প্রায় এক লক্ষ কর্মী-অফিসারকে চলতি বছরের মধ্যেই স্বেচ্ছা অবসরে পাঠানো হবে। একসময় টেলিকম মন্ত্রক থেকে অপশন নিয়ে এই দুই সরকারি কোম্পানিতে যোগ দেওয়া কর্মীদের ক্ষেত্রেই এই স্বেচ্ছা অবসর স্কিম প্রযোজ্য হতে চলেছে। সব মিলিয়ে কমবেশি দেড় লক্ষ এই ধরনের কর্মী রয়েছেন দুই সংস্থায়। ৫০ বছর বয়স ছুঁলেই কর্মী-অফিসাররা এই স্কিমে আবেদন জানাতে পারবেন।
সরকারি সূত্রে খবর, বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে না পারায় দুই টেলিকম সংস্থার কর্মী-অফিসারদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া নিয়ে কথাবার্তা চলছিল অনেক দিন ধরেই। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের জন্য তা ধামাচাপা পড়েছিল। তবে ভোটে বিপুলভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পর ১০০ দিনের মধ্যেই লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাবসর, বিলগ্নিকরণ ইত্যাদি প্রকল্প বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নেয় মোদী সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠীও তৈরি করে দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নেতৃত্বাধীন সেই মন্ত্রিগোষ্ঠী সপ্তাহ দুয়েক আগে দুই টেলিকম সংস্থার কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়।
এরপরেই গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে টেলিকম মন্ত্রক একটি ক্যাবিনেট মেমোও তৈরি করেছে। রুটিন মেনে এই মেমো অর্থ, ভারী শিল্প, আইন প্রভৃতি নোডাল মন্ত্রক ঘুরে আসার পর তা ক্যাবিনেট সেক্রেটারির কাছে পাঠানো হবে শীঘ্রই। সম্ভবত মন্ত্রীসভার আগামী বা তার পরের বৈঠকে এই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়বে। তারপরই স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষ। শোনা যাচ্ছে, দুই সংস্থার কর্মীদের মূলত গুজরাত মডেল অনুযায়ী স্বেচ্ছাবসরের প্যাকেজ দেওয়া হবে। আবেদনকারীরা সর্বোচ্চ ৪০ মাসের বেতন (বেসিক+ডিএ) পাবেন। এককালীন অর্থ হিসেবে অবশ্য সবাই ৪০ মাসের বেতন পাবেন না। সেক্ষেত্রে চাকরি করে আসা বছরগুলির ক্ষেত্রে বছর প্রতি ৩৫ দিন এবং চাকরি বাকি থাকা বছরগুলির ক্ষেত্রে বছর প্রতি ২৫ দিনের বেতনের হিসেব করা হবে।