লোকসভায় আগেই পাশ হয়েছিল তিন তালাক বিল। কিন্তু রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে আটকে যেতে হচ্ছিল শাসক দলকে। গতকালও তিন তালাক বিলকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি তোলে বিরোধীরা। কিন্তু ভোটাভুটিতে খারিজ হয়ে যায় তাদের প্রস্তাব। ১০০জন সাংসদ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন। পক্ষে ভোট পড়ে ৮৪ জনের। তখনই রাজ্যসভায় বিজেপির জয় কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায়। আর তারপরেই বহু বিজেপি নেতা ঢাক পিটিয়ে বলতে শুরু করেন, মুসলিম মহিলারা নাকি অবশেষে মুক্ত হয়েছেন! তবে এ নিয়েই এবার মুখ খুললেন এ রাজ্যের গ্রামে গ্রামে তালাক প্রাপ্ত মহিলাদের জন্য লড়াই করা খাদিজা বানু।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে মুর্শিদাবাদের গ্রামে গ্রামে আমরা তালাক প্রাপ্ত মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। সেই সুবাদে প্রতিদিন তালাকপ্রাপ্ত মহিলার কান্না শুনে আসছি। এই অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি, যে বিল পাশ হল তা আদৌ মুসলিম মহিলাদের কোনও স্বার্থ রক্ষা করবে না। বরং বিলের কিছু বিধান দেখে আমি নিশ্চিত, এই আইনে মৌলবাদীদের হাতই আরও শক্তিশালী হল।’ তাঁর মতে, এই বিল আসলে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির মুসলিম মৌলবাদীদের সঙ্গে বোঝাপড়ার নজির। এর পিছনেও ভোটের অঙ্ক আছে। এই কথার সাপেক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন খাদিজা।
তাঁর কথায়, ‘এই বিলে তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পুরোপুরি নস্যাৎ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত বলেছিল, তালাককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এই প্রথা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। কিন্তু যে আইন পাশ হল তাতে তালাক বন্ধ হবে না। আইনের ফাঁক গলে এর অপব্যবহার চলতেই থাকবে। সংসদে পাশ হওয়া তালাক বিলে বলা হয়েছে, কোনও মহিলা বা তার পরিজনকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ হলে অভিযুক্তের তিন বছর জেল হবে। প্রশ্ন হল, স্বামী জেলে গেলে স্ত্রী এবং সন্তানের ভরনপোষণের দায়িত্ব কে নেবে? বাচ্চাদের চিকিৎসা, পড়াশুনোর খরচ কে সামাল দেবে?’
খাদিজার ব্যাখ্যা, ‘আমাদের দেশে মহিলারা তো বেশির ভাগই কপর্দকশূন্য। স্বামী তালাক দিয়ে জেলে গেলে মহিলা কি শ্বশুরবাড়ি টিকতে পারবেন? নাকি, বাপের বাড়ি তাঁকে সন্তান-সহ ফিরিয়ে নেবে? দুটোর কোনওটাই হবে না। ফলে স্বামী তালাক দেওয়ার পরও মহিলারা মুখ খুলবেন না। আইন-আদালত করা কি চাট্টিখানি কথা?’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনও পুরুষ স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর যদি পুনরায় সেই মহিলার সঙ্গে তিনি ঘর করতে চান, তা হলে মহিলাকে আগে দ্বিতীয় কোনও পুরুষের সঙ্গে ঘর বাঁধতে হবে। দ্বিতীয় স্বামী তাঁকে তালাক দিলে তবেই তিনি প্রথম স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে পারবেন। এই অবমাননাকর প্রথা বাতিল হল না, থেকেই গেল।’
খাদিজার মনে করেন, আইন যাই বলুক না কেন, মুসলিম পুরুষেরা দ্বিতীয় বিয়ে করে ঘর সংসার করবে আর আগের স্ত্রী আদালতে ছুটে বেড়াবেন। তাই তাঁর মতে, নিষিদ্ধ হওয়া উচিত ছিল বহু বিবাহও। ইসলামে এটাও আইনসিদ্ধ। এরও সুযোগ নিচ্ছে মুসলিম পুরুষদের একাংশ। খাদিজার সাফ কথা, ‘অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন, ধর্মের বিধানকে কী করে সরকার এবং সংসদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে? আমার প্রশ্ন, অপরাধীকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামে যে পদ্ধতি অনুসরণ করার কথা বলা আছে তা কি আমাদের দেশে চালু আছে? ফৌজদারি দণ্ডবিধি মেনেই তো বিচার হয়ে থাকে।’