সরকারি প্রকল্পে কাটমানি বা কমিশন খাওয়ার দিন যে শেষ, আগেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, দুর্নীতি রুখতে তিনি গড়ে দিয়েছিলেন ‘মনিটরিং সেল অন প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন অ্যান্ড গ্রিভ্যান্সেস’ অথবা ‘গ্রিভ্যান্স সেল’। পাশাপাশি নাগরিকদের কোনও সমস্যা বা অভিযোগ থাকলে সরাসরি মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করে সমস্যার কথা জানানোর এক ব্যবস্থাও পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেছিল তৃণমূল। কিন্তু কলকাতার বাইরে অন্য জেলার সমস্যা কে শুনবে? না আর কোনও চিন্তা নেই। রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের, যে কোনও মানুষের যে কোনও কোনও সমস্যা বা মতামত থাকলে এবার থেকে সরাসরি ফোন করতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই।
প্রসঙ্গত, সোমবার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নজরুল মঞ্চে বৈঠক করেন তৃণমূল নেত্রী। যেখানে হাজির ছিলেন ব্লক সভাপতি থেকে শুরু করে দলের শীর্ষস্তরের নেতারা। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক-মন্ত্রীদেরও অনেকে। সেখানেই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন মমতা। বৈঠক শেষে দেখা যায়, নজরুল মঞ্চের সভাকক্ষ থেকে নেতারা বেরিয়ে আসছেন চটের সুন্দর ব্যাগ হাতে। তাতে দিদির ছবি দেওয়া স্টিকার, কার্ড, টি-শার্ট। সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে বিধায়করা সংগ্রহ করছেন প্যাকেটে মোড়া ‘দিদিকে বলো’ কিট। জানা গেছে, নিচুতলায় জনসংযোগে এই সব সামগ্রীর সদ্ব্যবহার করতে বলা হয়েছে জনপ্রতিধিদের।
শুধু তাই নয়। বহু নেতার গাড়ির রিয়ার স্ক্রিনেও গতকাল সাঁটানো হয়েছে ‘দিদিকে বলো’ ফেস্টুন। আয়োজনে স্পষ্ট, নতুন জনসংযোগ-পন্থার ব্র্যান্ডিংয়ে গুছিয়ে নেমেছে শাসকদল। এ যাবৎ নজরুল মঞ্চে দলের অসংখ্য বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সভাস্থল, সভাকক্ষের মূল ফটক, দেওয়াল সোমবার যে ভাবে মুড়ে ফেলা হয়েছিল ক্যাম্পেন-ফেস্টুনে, আগে তা হয়নি। আমজনতা তো বটেই, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়করাও দলের এই মেক-ওভারে বেশ বিস্মিত। একই সঙ্গে উচ্ছ্বসিতও। আবার, মা-মাটি-মানুষের দল তার নতুন জনসংযোগ-কৌশলে শহর ও গ্রামের নতুন প্রজন্মের পছন্দকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
প্রসঙ্গত, এটা ইমোজি, স্টিকার, স্মাইলি পাঠানোর যুগ। তাই দলনেত্রীর মুখচ্ছবি ১৮-২০ বছরের ভোটারদের হাতে তুলে দিতে স্টিকারই হতে পারে যুগোপযোগী মাধ্যম। এমনই ব্যাখ্যা দলের এক মধ্যবয়স্ক বিধায়কের। ভেবেচিন্তেই এই ধরনের উপকরণ তুলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আবার সচেতন ভাবেই ‘দিদিকে বলুন’ না করে ‘দিদিকে বলো’ করা হয়েছে। কারণ বলুন-এ দূরত্বের ব্যাপার থেকে যায়। কিন্তু ‘বলো’ কথাটা আপনজনকেই বলা যায়। তাই সচেতন ভাবেই এটা ব্যবহার করা হয়েছে। সবমিলিয়ে, মেঠো রাজনীতির অগাধ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরেও দলের সর্বময় নেত্রী মমতা যেভাবে সম্পূর্ণ নতুন এক জনসংযোগ-ব্যবস্থার আয়োজন করেছেন, তা দেখে তাজ্জব গোটা দলই।