রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ভুখা ঠিকা শ্রমিকদের এই মুহূর্তে আর কিছুই যে হারানোর মতো নেই! কথা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএসএনেলের। বিএসএনএল ঠিকা শ্রমিক কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মিলন হালদার ও ডিভিশনাল সম্পাদক অমিতকুমার মণ্ডল জানান, কলকাতা সার্কেলে ৪২৮০ জন ঠিকাকর্মী রয়েছেন। আর রাজ্যজুড়ে সব মিলিয়ে হাজার সাতেক। মাইনে মাসে মাথাপিছু ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছরের গোড়া থেকে বেতন বন্ধ। মাঝে এক মাসের বেতন জুটেছিল। কিন্তু তারপর যে কে সেই।
মোদী স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন আচ্ছে দিন আসবে। প্রথমবার মসনদে নিজের জায়গা পাকা করবার পর দ্বিতীয় বারও তিনি মসনদে বসেছেন, শুধু কথা রাখেননি। বিএসএনএলের ঠিকা কর্মীদের মুখে হাসি ফোটেনি। ছ’মাস বেতন না পেয়ে অফিসের গেটের সামনে সোমবার সকাল থেকেই অন্য ঠিকাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন প্রবীণ বিমল।
যাদবপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে বিএসএনএলের ঠিকাকর্মী বিমল সর্দার পকেট থেকে বের করলেন একটা ছোট শিশি। ছ’মাস বেতন না পেয়ে অফিসের গেটের সামনে সোমবার সকাল থেকেই অন্য ঠিকাকর্মীদের সঙ্গে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হয়েছিলেন প্রবীণ বিমল। কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে শুধোলেন, ‘বিমলদা ওটা কি ওষুধ?’ শিশিটা মুখের সামনে ধরে বিমলের জবাব, ‘ওষুধ না রে, বিষ। আর পারি না। তোদের বয়স আছে। তোরা আন্দোলন কর। বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। সবাই লাথি ঝাঁটা মারে। এই বয়সে আর নিতে পারছি না। এটা খেলে দশ মিনিটে মরে যাব, গ্যারান্টি।’
গত ২৩ জুলাই রাজ্যের ডেপুটি লেবার কমিশনার পি কে পান্ডা বিএসএনএলের কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের সিজিএমকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, এ বার বকেয়া বেতন না মেটালে সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, বালিগঞ্জ এক্সচেঞ্জে টিএমসি সমর্থিত বিএসএনএল কনট্রাকচুয়াল লেবার ইউনিয়নের নেতা শেখ সাহাবুদ্দিন ও সিটু সমর্থিত ক্যালকাটা ঠিকা মজদুর ইউনিয়নের নেতা সুশান্ত দাস সন্তানদের স্কুলের মাইনে মেটাতে পারছেন না, বাজারহাট করাও মুশকিল। বাঁচার তাগিদে তাঁরা বাম-ডান রাজনীতির ব্যবধান ভুলে হাতে হাত মিলিয়ে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। কর্মীদের অবস্থানের জেরে এ দিন এক্সচেঞ্জগুলিতে অফিসার বা স্থায়ীকর্মীরা কেউ ঢুকতে পারেননি। ফাঁকা অফিস ধু ধু করছে। বিশাল আয়তনের ভবনগুলি এক নজরে খণ্ডহর বলে ভ্রম হয়। কী যাদবপুর, কী রানিকুঠি, সর্বত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের ছাপ।
রানিকুঠি এক্সেচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন বেতন না মেলা ঠিকাকর্মীদের ঘরণীরাও। কারও কারও সঙ্গে শিশু। যেমন, মধুমিতা মণ্ডল এসেছেন ছ’বছরের ফুটফুটে মেয়ে আরাধ্যাকে নিয়ে। মধুমিতা বলেন, “আমার স্বামী মাইনে না পেয়ে চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কোম্পানি ইএসআইয়ের টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় সে ভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না। মেয়েটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ত। স্কুলের ফি দিতে না পেরে ছাড়িয়ে নিয়ে পাড়ার একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করেছি”। তবে মোদী সরকার এই বিএসএনএলের কর্মী ছাটাই, বেতন আটকে যাওয়া, এসব বিষয়ে ভাবার অবকাশে নেই।