বাজেট ঘোষণার পর থেকেই বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধীতা শুরু করেছিল আরএসএসের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। বাজেট ঘোষণা মতো বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়া হলে দেশের অর্থনীতি ঘোর সঙ্কটে পড়বে বলে সতর্ক করেছিলেন মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন। মনে করা হচ্ছিল, কেবল এর জেরেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বর্ষীয়ান আইএএস সুভাষ চন্দ্র গর্গকে। কিন্তু আদতে নাকি তা নয়। অর্থ মন্ত্রক থেকে সুভাষচন্দ্র গর্গকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে বলে দাবি করল কংগ্রেস। আর তা হল, নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত শিল্পপতি গৌতম আদানিকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় আপত্তি তুলেছিলেন গর্গ।
গর্গের নাম সরাসরি না বললেও কংগ্রেসের অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীর হাতে দু’টির বেশি বিমানবন্দর তুলে দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল আর্থিক বিষয়ক দফতর। গর্গই এই দফতরের দায়িত্বে ছিলেন। সেই আপত্তি নাকচ করে মোদী সরকার আদানি গোষ্ঠীর হাতে পাঁচটি বিমানবন্দর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনটির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ইতিমধ্যেই ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। রবিবার দলের সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেস এই অভিযোগ তোলায় নতুন করে দিল্লির রাজনীতিক ও আমলাদের মধ্যে হইচই পড়েছে।
কারণ, নতুন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটের পরেই বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার ঘোষণায় আপত্তি তোলে আরএসএস। যা অর্থসচিব তথা আর্থিক বিষয়ক দফতরের সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মস্তিষ্কপ্রসূত বলেই সরকারি সূত্রে বলা হয়। গর্গকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সরকারের একাংশের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রীর দফতর অর্থ মন্ত্রককে ডলারে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সীতারামন গতকালই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এমন কোনও কথা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও পুনর্বিবেচনা করছি না। আমাকে কেউ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতেও বলেনি।’ সরকার ডলারে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এগোবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নে নির্মলার জবাব, ‘আমি তো বাজেটে এই ঘোষণা করেছি।’
এখানেই প্রশ্ন উঠেছে। নির্মলার কথা সত্যি হলে আরএসএস-এর আপত্তি সত্ত্বেও ডলারে ঋণ নিয়ে মোদী সরকার পিছু হঠছে না। তা হলে গর্গকে বিদ্যুৎ মন্ত্রকে পাঠানো হল কেন? কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরার অভিযোগ, দেশের ১২৩টি বিমানবন্দরের মধ্যে ২৫টি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মাত্র ১৪টি বিমানবন্দর লাভজনক। আর এই ১৪টির মধ্যে আমেদাবাদ, লখনউ, ম্যাঙ্গালুরু, তিরুবনন্তপুরম, জয়পুর- এই ৫টিই তুলে দেওয়া হচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর হাতে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী নিজের শিল্পপতি বন্ধুকে এই বরাত ‘পাইয়ে দিয়েছেন’। কারণ দরপত্র ডেকে নিয়ম মেনে হলেও, আর্থিক বিষয়ক দফতরের এতে আপত্তি ছিল। আর তার জেরেই সরতে হয়েছে গর্গকে।