দেশের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য চালু করা পেনশন স্কিম দাগ কাটতে পারল না বাংলায়। সংশ্লিষ্ট মহলের মত, প্রকল্পটিতে যে আর্থিক সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তা আদৌ আকর্ষণীয় না হওয়ায় হালে তেমন পানি পায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য যে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে, তা আর্থিকভাবে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হওয়ায় কেন্দ্রের প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়েছে।
গ্রাহক জোগাড়ের নিরিখে এখন দেশেই ১৩ নম্বরে রয়েছে বাংলায়। কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি চালু হয়েছে প্রায় পাঁচ মাস। অথচ এরই মধ্যে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক জোগাড় করে ফেলেছে দেশের অন্য রাজ্য। যেমন হরিয়ানায় গ্রাহক সংখ্যা ৬ লক্ষ ৬ হাজার ২৮০। এরপর রয়েছে মহারাষ্ট্র (৫ লক্ষ ৫৪ হাজার), উত্তরপ্রদেশ (৫ লক্ষ ১১ হাজার), গুজরাত (৩ লক্ষ ৫২ হাজার)। বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে এই সংখ্যাটা লাখের উপরে। তার অনেক পরে আছে বাংলা। এ রাজ্যে গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজারেও পৌঁছয়নি, মাত্র ৪৮ হাজার ৬১১।
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’ চালু হয় ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল। এখানে সদস্য কতজন? ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্যের আর্থিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, প্রকল্প চালুর পর ২০ মাসে ১ কোটি ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৬৫ জন এসেছেন ওই স্কিমের আওতায়।
রাজ্য স্কিমে ঢেলেছে প্রায় ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। স্কিমের সুবিধাগুলি কী কী? দপ্তর সূত্রে খবর, এখানে কোনও পেনশন নেই। কিন্তু পিএফে টাকা জমানোর সুযোগ আছে। মাসে ২৫ টাকা করে গ্রাহক দিলে, রাজ্য দেবে ৩০ টাকা। মিলবে জিপিএফের সমান সুদ। জমা টাকা অবসরকালে পাবেন গ্রাহক। তিনি ও তাঁর পরিবার বছরে ২০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ পাবেন। গ্রাহকের মৃত্যুতে মিলবে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ দু’লক্ষ টাকা। গ্রাহকের ছেলেমেয়ের পড়াশুনোয় বছরে ৪ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে ওই স্কিমে। আছে আরও কয়েকটি সুবিধা।
অনেকেই বলছেন, হরেক সুবিধার কারণেই যেভাবে ২০ মাসে সদস্য জোগাড় করেছে রাজ্য, তাতে আলাদা করে কেন্দ্রীয় স্কিমে আগ্রহের প্রয়োজন মনে করেননি অনেকেই। ১৮ বছর বয়সে যদি কেউ কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি নেন, ৪২ বছর ধরে টাকা জমা দেওয়ার পর তাঁর তিন হাজার টাকা পেনশন আদৌ কোনও সামাজিক সুরক্ষা দেবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।