দেশজুড়ে চলা গণপ্রহারের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের ৪৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। আর্জি জানিয়েছিলেন, এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। আর তারপরেই এই রাজ্যে গণপ্রহারের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ করতে যেন কালক্ষেপ না হয়, সে ব্যাপারে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছে নবান্ন।
প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যা, গণপ্রহারের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সামগ্রিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় সিআইডি-কে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘গত বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে কালক্ষেপ করেনি রাজ্য। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক পদক্ষেপের রূপরেখা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন সেই পদ্ধতি মেনেই কাজ চলবে গোটা রাজ্যে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, প্রশাসনিক এবং আইনি পথে আটঘাট বেঁধে গণপ্রহার মোকাবিলার রূপরেখা তৈরি হয়েছে। জেলা এবং কমিশনারেটগুলিতে এমন সমস্যা মোকাবিলার জন্য আলাদা আলাদা নোডাল অফিসার পদ তৈরি করা হয়েছে। জেলা স্তরে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারই হবেন নোডাল অফিসার। কমিশনারেট এলাকায় পুলিশ কমিশনার ডিসি পদের কোনও অফিসারকে নোডাল অফিসারের দায়িত্ব দেবেন। এমনকি জেলা পুলিশ ও কমিশনারেটে পৃথক ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হচ্ছে।
বিশেষ একটি স্লোগানকে কেন্দ্র করে গণপ্রহারের ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়ের হওয়া মামলায় ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তা-ও রিপোর্ট আকারে চেয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। সেই সময় একটি মন্ত্রীগোষ্ঠী তৈরি করেছিল কেন্দ্র। অন্তত ১২টি রাজ্য হলফনামা দিয়ে পদক্ষেপের রিপোর্ট জমা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে।
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, উস্কানিমূলক বার্তা ছড়ানো হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে
ইন্ডিয়ান পেনাল কোড (আইপিসি)-এর ১৫৩এ ধারায় অভিযোগ দায়ের করবে পুলিশ। এই গোটা প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করতে সিআইডি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলা হলে তার বিচার এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিআইডি-কে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের খবর, কোনও এলাকায় গণপ্রহারের ঘটনা ঘটে থাকলে অথবা ঘটার আশঙ্কা থাকলে সেখানে পৃথক ভাবে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উত্তেজনাপূর্ণ কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোথাও হঠাৎ জমায়েত হলে তা দ্রুত সরিয়ে দিতে হবে। জটলা যাতে ফের দানা না বাধে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে পুলিশকে। কোনও সমস্যা হলে আঞ্চলিক স্তরে তা মেটাতে হবে।
পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় জনরোষ তৈরি হতে পারে কি না, তা আঁচ করতে গোয়েন্দা বিভাগকে সক্রিয় করা হয়েছে। ওই ঘটনার কোনও বিবরণ বা বিকৃত ব্যাখ্যা যাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় না-ছড়ানো হয়, তার উপরেও সর্বদা নজর থাকবে।