প্রায় রোজই কোনও না কোনও বিল পেশ, আলোচনা আর সংখ্যার জোরে তা পাশ করিয়ে নেওয়ার যে ট্রেন্ড শুরু করেছে কেন্দ্র, প্রথম থেকেই তার বিরোধীতায় সরব বিরোধীরা। এরই মধ্যে লোকসভা ও রাজ্যসভায় আরও প্রায় গোটা কুড়ি বিল পাশ করাতে সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়াল মোদী সরকার। কিন্তু তা হলেও রোজকারের প্রশ্ন-উত্তরের পর্বটিই বাতিল করে বাড়তি আট দিনে একের পর এক বিল পাশ করাতে চায় তারা।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে গত সপ্তাহেই বিজেপি সাংসদদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘২৫টির মতো বিল আছে। দিনে দু’টি করে পাশ করতে হবে।’ এর ফলে বিজেপির এক সাংসদের দাবি, ‘এর পরে বছরের শেষে শীতকালীন অধিবেশন। এ বার সরকার যত বিল পাশ করাতে চাইছে, সে সব ঠিক মতো হয়ে গেলে আর শীতকালীন অধিবেশন ডাকারও প্রয়োজন নেই।’
অন্যদিকে, বিরোধী সাংসদরা বলছেন, গোটাটাই তো গা-জোয়ারি! বিরোধীদের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আলোচনা না করে সরকার একতরফা সংসদের মেয়াদ বাড়াল। লোকসভায় সংখ্যার জোরে পাশ করিয়ে নিচ্ছে একের পর এক বিল। আর রাজ্যসভাতে সংখ্যা না থাকলেও ‘বুথ দখল’ হচ্ছে। ভোটের সময় বিজেপির সাংসদ-মন্ত্রীরা শাসাচ্ছেন অন্য দলের সাংসদদের। ভোটের স্লিপ কেড়ে নিচ্ছেন।
সম্প্রতি রাজ্যসভায় এমন ঘটনাই ঘটেছে, তথ্যের অধিকার বিল পাশের সময়ে। উচ্চকক্ষে শাসক গোষ্ঠী এখনও সংখ্যালঘু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে ফোন করে নবীন পট্টনায়েক এবং কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দলের সমর্থন জোগাড় করেন। জগন্মোহন রেড্ডির দল আগে থেকেই সমর্থন দিয়ে রেখেছিল। তাই বিরোধী দলের সাংসদেরা জগনের দলের সমর্থন চাইতে যান। সেই সময় নাকি জগনের দলের পক্ষ থেকে শুধু একটি সংখ্যা বলা হয়— ‘উনিশ’।
এই ‘উনিশ’ আসলে কী, তা বলতে গিয়ে বিরোধী শিবিরের এক নেতা বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জগনের বিরুদ্ধে এখনও উনিশটি মামলা রয়েছে। সেটিই না কি সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কারণ!’ কিন্তু এনডিএর বাইরে এই ‘বন্ধু-দলের’ সমর্থন হাসিলের পরেও তথ্যের অধিকার বিলে ভোটাভুটির সময়ে টিডিপি থেকে বিজেপিতে আসা সাংসদ সি এম রমেশকে অন্য এক সাংসদের ভোটার স্লিপ কেড়ে নিতে দেখা যায়। বিরোধী শিবিরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় পীযূষ গয়ালকে।
তখন রাজ্যসভায় চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু ছিলেন না। পরে তিনি শাসক দলের নেতাদের সতর্ক করে বলেন, ‘ভোট প্রক্রিয়া চালু হয়ে গেলে কেউ যেন নিজের আসন ছেড়ে না যান। ক্ষমতায় থাকা সদস্যদেরও সতর্ক হতে হবে। যে অভিযোগ আমি পেয়েছি, তা আদৌ স্বাস্থ্যকর নয়।’