আক্ষরিক অর্থেই নিজের কেরিয়ারে সবচেয়ে ভালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সোনার মেয়ে হিমা দাস। তিন সপ্তাহেরও কম সময়ে তাঁর গলায় পাঁচটি আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক। দাঁতে দাঁত চেপে সংগ্রামের পাকদণ্ডি পেরিয়ে জীবনের এই পর্বে আসামের কৃষক পরিবারের এই কন্যা। গ্রামের মেঠো পথ ধরেই তাঁর প্রথম অনুশীলন। হাজার বার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে পা, তবু স্বপ্ন দেখে গেছেন। এখন তাঁরই হাতে বহুজাতিক জুতো প্রস্তুতকারী সংস্থার এনডোর্সমেন্ট।
আসামে ঢিং শহরের কাছে কান্ধুলিমারি গ্রামের এক কৃষক পরিবার। রোদে পুড়ে, জলে ভিজে মাঠে কাজ করেন রঞ্জিত দাস। পাঁচ সন্তানের মুখে পান্তাভাত তুলে দিতে নুন ফুরিয়ে যায় তাঁর স্ত্রী জোনালির রান্নাঘরে। তার মধ্যে আবার ছোট মেয়ে হিমার ফুটবলের নেশা। গ্রামের মাঠে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটবল খেলে সেই বালিকা। কোনও টিটকিরি, টিপ্পনি থামাতে পারে না তাকে। বাড়ির লোকের নিষেধও কানে তোলে না। জন্ম ২০০০ সালের ৯ জানুয়ারি। ঢিং পাবলিক স্কুলের ছাত্রী হিমা ছোটবেলায় ফুটবলই খেলতেন। বড় হয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। সবুজ মাঠ থেকে তাঁকে ট্র্যাকে নিয়ে আসেন তাঁর স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক। তাঁর অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে হিমাকে গ্রাস করল দৌড়ের নেশা।
এক আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতায় আলাপ কোচ নিপন দাসের সঙ্গে। তখন অসমের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিপন। একদিন হিমাকে গ্রাম থেকে ১৪০ কিমি দূরে নিয়ে এলেন গুয়াহাটি শহরে। স্পোর্টস কমপ্লেক্স থেকে শুরু হল হিমার নতুন দৌড়। ২০১৮-র জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডের তাম্পেরে শহরে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। মহিলাদের ৪০০ মিটারের দৌড়। হিমার ঐতিহাসিক ৫১.৪৬ সেকেন্ড পাল্টে দিল পরের দিনের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম।
কমনওয়েলথ ও এশিয়ান গেমসে পদকের খরা এ বছর সুদে আসলে উশুল করে নিলেন হিমা। গত ২ জুলাই পোল্যান্ডের পোজনন গ্রাঁ প্রি-তে ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক। হিমার সময় ছিল ২৩.৬৫ সেকেন্ড। ৭ জুলাই আবার সোনা। পোল্যান্ডেরই কুতনো অ্যাথলেটিক্স মিটে তাঁর সময় ২৩.৯৭ সেকেন্ড। তৃতীয় স্বর্ণপদক চেক প্রজাতন্ত্রের ক্লাদনো শহরে। ২০০ মিটার দৌড়ে হিমার সময় ছিল ২৩.৪৩ সেকেন্ড।
হিমার পা দুটো খুব ভাল করেই জানে, থেমে গেলেই থেমে যাবে সব কিছু। পদক ছাড়া কেউ মনে রাখবে না ২০১৮-র অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত হিমাকে। তাই চরৈবেতিকেই মন্ত্রগুপ্তি করে নিয়েছেন ইউনিসেফ-এর ইউথ অ্যাম্বাসাডর হিমা দাস। তাঁর বানভাসি রাজ্যটাকেই দেশের ক্রীড়া মানচিত্রে আরও স্পষ্ট করে তুলতে চান অসম সরকারের স্পোর্টস অ্যাম্বাসাডর হিমা।