স্পেনের এক দশকেরও বেশি চলা আধিপত্য বর্তমান শতাব্দীতে নিজ ভূখণ্ডের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে স্প্যানিশ কয়েকটি দল। ২০০৯ সালের পর শুধুমাত্র রিয়াল মাদ্রিদ একাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে সর্বমোট ৪ বার। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ শিরোপা না জিততে পারলেও ফাইনাল খেলেছে মোট ২ বার। আর এই পরিসংখ্যানে রিয়ালের পরই অবস্থান বার্সেলোনার। গত ১০ বছরে কাতালান ক্লাবটিও ৩ বার শিরোপা জিতেছে। অর্থাৎ, বিগত ১০ বছরে ৯ বার ফাইনাল খেলেছে স্প্যানিশ দলগুলো, যেখানে ৭টি শিরোপা পৌঁছে দিয়েছে স্পেনে। অন্যদিকে, জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো বিগত ১০ বছরে এখন অবধি মাত্র ৫ বার ফাইনালে পৌঁছাতে পেরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে ২০১২ এবং ২০১৯ সালের ফাইনালে। চেলসি এবং লিভারপুল ইংল্যান্ডকে এই সাফল্য এনে দেয়।
স্প্যানিশ তিন হেভিওয়েট দলের এমন প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাসের মাঝে কোনো ফুটবল ভক্তই হয়তো ভাবেননি, হঠাৎ করে জ্বলে উঠবে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে একে একে বাদ পড়েছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। অতঃপর ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো তে ফাইনালে মুখোমুখি হয় প্রিমিয়ার লিগের দুই জায়ান্ট লিভারপুল ও টটেনহ্যাম। পচেত্তিনোর সুকৌশলে ম্যানচেস্টার সিটি, আয়াক্সের মতো দলকে পরাজিত করে রূপকথার জন্ম দিয়ে গতবার প্রথমবারের মতো ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছিল টটেনহ্যাম। আর তারপরেই ধীরে ধীরে স্প্যানিশ জায়ান্টদের জায়গা দখল করতে শুরু করে ইংরেজরা।
ফেরা যাক গত মরসুমের সেমিফাইনাল পর্বে। শিরোপাজয়ী লিভারপুল দুই লেগ মিলিয়ে বার্সেলোনাকে পরাজিত করে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে। প্রথম লেগে বার্সেলোনার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যু’তে ০-৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। এমন পরাজয়ের পর অবশ্য কেউই ভাবেনি যে, আবার ফিরে আসতে পারবে দলটি। কিন্তু ফিরতি লেগে ঠিকই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখায় লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে বার্সেলোনার তারকাখচিত স্কোয়াডকে ৪-০ গোলে পরাজিত করে ফাইনালে উঠেছিল লিভারপুল।
একইভাবে, ইউরোপা লিগের সেমিফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ার মুখোমুখি হয় আর্সেনাল। হিসেব করে দেখা যায়, ভ্যালেন্সিয়ার গোটা স্কোয়াডের চেয়ে আর্সেনালের দুই স্ট্রাইকারের দাম বেশি। প্রথম লেগের ম্যাচটি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ম্যাচে নিজেদের কিছু ভুলের কারণে ৩-১ গোলে পরাজিত হয়েছিল ভ্যালেন্সিয়া। পরের লেগেও একই ঘটনা ঘটায় স্প্যানিশ দলটি। নিজেদের মাঠে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেও ৪-২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয় তারা। অথচ দুই লেগে বল দখল এবং আক্রমণ রচনায় এগিয়ে ছিল ভ্যালেন্সিয়া। সেক্ষেত্রে দুর্বল ফিনিশিংয়ের জন্য কখনোই আর্সেনালের শত মিলিয়নকে দায়ী করা যাবে না!
তবে অর্থ আয়ে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো লা লিগার থেকে এগিয়ে থাকে, এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। কারণ গত মরসুমে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকেও হার্ডাসফিল্ড শুধুমাত্র টেলিভিশন সম্প্রচার থেকে যে অর্থ আয় করেছে, তা ২০১৭-১৮ মরসুমে বার্সেলোনা ও রিয়ালের টিভি সম্প্রচারের মোট আয় থেকেও বেশি। এমনটা অর্থ ব্যয়ের কারণেই নয়, জনপ্রিয়তাও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। সে হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের এমন সফলতার ক্ষেত্রে তাদের অনেক অর্থ ব্যয়কে উল্লেখ করা একেবারেই অযৌক্তিক।
তবে সেরা কোচদের প্রভাবকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর এমন উল্লেখযোগ্য সফলতার পেছনে সময়ের সেরা কয়েকজন কোচের অবদান রয়েছে। গত মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ী লিভারপুলের কোচ ছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ এবং ইউরোপা জয়ী চেলসির কোচ ছিলেন মরিসিও সারি। যদিও সারি বর্তমানে ইংল্যান্ড ছেড়ে ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন, তবে ক্লপ এখনও লিভারপুলেই রয়ে গেছেন। আর এই ক্লপের নেতৃত্বে টানা দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে লিভারপুল। প্রথমবার স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে পরাজিত হলেও পরেরবার পচেত্তিনোর টটেনহ্যামকে পরাজিত করে শিরোপা জিতেছিল দলটি।
২০১৩ সালে টটেনহ্যামের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ সুনামের সঙ্গেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন আর্জেন্টাইন পচেত্তিনো। একাধিকবার লিগ শিরোপা জেতার দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ব্যর্থ হন তিনি। তবে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে পৌঁছাতে বেশ কষ্টকর পথ পাড়ি দিতে হয় পচেত্তিনোকে। গুয়ার্দিওলার ‘হট ফেভারিট’ ম্যানচেস্টার সিটি টুর্নামেন্টে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাসকে পরাজিত করে। এমনকি সেমিতে কোয়ালিফাই করা আয়াক্সকেও পরাজিত করে তাঁর শিষ্যরা। আর এই গোটা টুর্নামেন্টে তিনি পাশে পাননি …