লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর পর্যালোচনা বৈঠকেই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এখন থেকে দল এবং সংগঠনের কাজে আরও বেশি করে মন দেবেন তিনি। কারণ একাধিক জনকল্যাণকর প্রকল্প চালুর পরও আসন সংখ্যা কমার পিছনে দলের জনবিচ্ছিন্নতাকেই দায়ী বলে মনে হয়েছিল তাঁর। এই জন্যই এবার আমজনতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সপ্তাহে একদিন ২ ঘণ্টা সময় সরাসরি মানুষকে দেওয়ার জন্য জেলা পরিষদের কর্মীদের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার, একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই জনসংযোগের লম্বা কর্মসূচী ঘোষণা করে তাতে কার্যত ‘সীলমোহর’ দিয়েছিলেন মমতা। যার মূল সুর—‘শহর ছেড়ে গ্রামে যান। বুথে-বুথে, চায়ের দোকানে, খাটিয়ায় বসে মানুষের কথা শুনুন।’ আর সোমবার এক বৈঠকের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই নির্বাচিত সদস্যরাই গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট-সহ সব উন্নয়নের কাজ করেন। আবার সরকারের সঙ্গে সাধারণ মানুষের যোগাযোগও তৈরি করেন। তাই সবাইকে বলা হয়েছে, সপ্তাহে একদিন ২ ঘণ্টা সরাসরি মানুষকে সময় দিতে হবে। যাতে মানুষ তাঁদের অভাব-অভিযোগ জানাতে পারেন। কোনদিন সেটা হবে, তা যেন মানুষকে আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।’
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত— তিনটি স্তরে পারস্পরিক সমন্বয় রেখে কাজের ব্যবস্থা করা। তাঁর কথায়, ‘পঞ্চায়েত সমিতিকে দিয়ে বিশেষ কোনও কাজ করানো হয় না। জেলা পরিষদকে বলা হয়েছে পঞ্চায়েত সমিতিকেও গুরুত্ব দিতে। কে কেমন কাজ করছে, তার ওপর নজর রাখবে জেলা পরিষদ। গ্রামাঞ্চলের সব উন্নয়নের কাজ পঞ্চায়েত স্তরে হবে। শুধু সেতুর দেখভাল করবে পূর্তদপ্তর। কারণ, সেতু রক্ষণাবেক্ষণ বা তৈরির প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো জেলা পরিষদের নেই।’ দুর্ঘটনা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। বৈঠকে পঞ্চায়েতের সব স্তরের সদস্যের মাসিক সাম্মানিক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করা হয়। ঠিক হয়েছে, জেলা সভাধিপতির মাসিক সাম্মানিক ৬ থেকে বেড়ে ৯ হাজার এবং সহকারী সভাধিপতির সাম্মানিক ৫ থেকে বেড়ে ৮ হাজার টাকা হবে। কর্মাধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষদের সাম্মানিক ৪ থেকে হবে ৭ হাজার টাকা। পরিষদের সাধারণ সদস্যদের সাম্মানিক দেড় হাজার থেকে বেড়ে হবে ৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সাড়ে ৩ হাজারের জায়গায় ৬ হাজার, সহসভাপতি ৩ হাজারের জায়গায় সাড়ে ৫ হাজার, কর্মাধ্যক্ষ আড়াই হাজারের জায়গায় ৫ হাজার এবং সমিতির সাধারণ সদস্যরা দেড় হাজারের জায়গায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে সাম্মানিক পাবেন। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রধানরা ৩ হাজারের জায়গায় ৫ হাজার, উপপ্রধান ২ হাজারের জায়গায় ৪ হাজার এবং উপসমিতির সঞ্চালক ১ হাজার ৮০০ টাকার জায়গায় পাবেন ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়াও পঞ্চায়েতের সাধারণ সদস্যরা দেড় হাজারের জায়গায় ৩ হাজার টাকা মাসিক সাম্মানিক পাবেন।
এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ওঁরা কিছুই পেতেন না। আমরা আসার পর চালু করেছি। কিন্তু সেটা খুবই কম। তাই সাম্মানিক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রাজ্য সরকারের ব্যয় হবে ২২৫ কোটি টাকা।’