আবার একবার ‘চাপিয়ে দেওয়ার’ নীতিতে হাঁটলেন মোদী সরকার। সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকায় লোকসভায় নিজেদের ইচ্ছা মতো বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছেন বিজেপি সরকার। এইবার ইউপিএ জমানায় তৈরি হওয়া তথ্যের অধিকার আইনে এবার পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিল কেন্দ্র। সোমবার লোকসভায় পাশ হয়ে গেল তথ্যের অধিকার আইনের সংশোধনী বিল। যা নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু হয়ে গেছে।
বিরোধীদের দাবি, তথ্যের অধিকার আইনে সংশোধনী এনে আসলে তথ্যের অধিকার আইনকেই লঘু করে দিতে চাইছে সরকার। নতুন নিয়মের ফলে তথ্য জানার অধিকারে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে এখনই। এই বিলকে ‘তথ্যের অধিকার ধ্বংসাত্মক বিল’ বলেও দাবি করছেন বিরোধী সাংসদদের একাংশ।
প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, রাজ্য ও কেন্দ্রের তথ্য কমিশনারের বেতন এবার নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। বর্তমান তথ্য কমিশনারের মেয়াদকাল পাঁচ বছর। তিনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পান। কিন্তু, বিলটি পাশ হয়ে গেলে তথ্য কমিশনারের মেয়াদকাল সরকার ইচ্ছামতো বদলে দিতে পারবে। এমনকী তাঁর বেতনও নির্দিষ্ট থাকবে না। তা নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে সরকার। আসলে, তথ্যের অধিকার সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ, এবং তথ্য জানানোর প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে তথ্য কমিশন।
বিরোধীদের অভিযোগ, মেয়াদ এবং বেতন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরোক্ষে তথ্য কমিশনারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে কেন্দ্র। তথ্য কমিশনারকে নিয়ন্ত্রণ করা মানেই পরোক্ষে তথ্য কমিশনকে নিয়ন্ত্রণ করা। তথ্য কমিশন একবার সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে সরকার বিরোধী কোনও তথ্যই প্রকাশ্যে আসবে না বলে আশঙ্কা বিরোধীদের। এর ফলে লঘু হয়ে যেতে পারে তথ্যের অধিকার আইনটি।
বিরোধী শিবির বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর আবেদন জানিয়েছে। সেইসঙ্গে কিছু সংশোধনী প্রস্তাবও আনা হয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের অভিযোগ, ‘এই বিল পাশ হওয়ার ফলে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অস্ত্র নষ্ট হয়ে যাবে।’ তথ্যের অধিকার সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে দিল্লীর রাস্তায় নেমেছেন আরটিআই কর্মীরা। এদিকে, লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও রাজ্যসভায় এখনও তথ্যের অধিকার সংশোধনী বিল পেশ হয়নি। বিল পেশ হলে তাতে বাধা আসতে পারে। কিন্তু এই বিল পাশ হয়ে গেলে তথ্য কমিশন মোদী সরকারের হাতের পুতুল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। এই ‘চাপানো’ রাজনীতি বারবার সাধারণ মানুষকে কোণঠাসা করে ফেলছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।