রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শব্দটি মানুষের মনের মধ্যে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। প্রেম-বিরহ-আনন্দ-দুঃখ সব অনুভূতি নিয়ে কবির সৃষ্টিতে মুগ্ধ আপামোর বাঙালি। শুধু বাঙালি বললে ভুল হয়। তাঁর ইংরেজি লেখা, কিংবা তাঁর সৃষ্টির অনুবাদ বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে মুগ্ধ করে। সব ক্ষেত্রেই ছিল তাঁর আবাদ আনাগোনা। সৃষ্টির সাগরে তিনি ডুব দিয়ে থাকতেন সর্বদা। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরেও যে জগৎটাকে অন্যভাবে চেনা যায়, সেটাই তিনি দেখিয়েছেন আমাদের। চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে এসে শিক্ষাকে গ্রহণ করা যায় সেই স্বাদ তাঁর থেকেই আস্বাদন করেছে মানুষ।
তবে এত কিছুর মধ্যেও তাঁর সম্বন্ধে যে আমাদের অনেক কিছু জানা বাকি। তাঁর সম্বন্ধে যত জানা যায় ততই কম। সেইরকমই এক তথ্য হয়তো অজানা থেকে গেছে তাঁর সম্পর্কে। তাঁর সঙ্গে বিজ্ঞাপন বিষয়েরও যে সম্পর্ক ছিল সেটা অজানা অনেকের কাছেই।
তৎকালীন ক্যাডবেরি কোম্পানির প্রস্তুত একটি প্রোডাক্ট ছিল বোর্ন-ভিটা। যা আজও সমানভাবে মানুষের কাছে জনপ্রিয়। তাঁর বিজ্ঞাপনে এখন শাহরুখ খানের মত ব্যক্তিত্বরা জায়গা করে নেন। তবে সেই সময় এই প্রোডাক্টের মুদ্রণ বিজ্ঞাপনে ছিলেন কবিগুরু। কোম্পানি কবির ছবি ও প্রোডাক্ট সম্পর্কে কবির এক লাইনের একটি লেখা দিয়ে বিজ্ঞাপন ছাপাত। যা প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যেত। কবির মধ্যে দিয়ে মানুষের মনের কাছে পৌঁছে যাওয়ার এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন ক্যাডবেরি কোম্পানি।
বিজ্ঞাপনের ছত্রে বোর্ন-ভিটার উপকারিতা সম্পর্কে লেখার পাশাপাশি ছিল, কবির লেখা এক লাইন। যেখানে কবি লিখছেন, ‘বোর্ন-ভিটা সেবনে উপকার পাইয়াছি।’ নিজের হস্তাক্ষরে এই লেখার নীচে আছে কবির স্বাক্ষর। ১৯৩৭ সালে মার্চ মাসে কবি এই এক ছত্রের চিঠিটি ক্যাডবেরি কোম্পানির কাছে লেখেন। যা পরবর্তীকালে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশিত হয়।
তবে উল্লেখযোগ্য আর একটি তথ্য অগোচরে থেকে গেছে মানুষের। তা হল এই বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থ কবি তাঁর সাধের শান্তিনিকেতনের কাজে ব্যবহার করেছিলেন। এই মানুষটির জীবনের পরতে পরতে এত ছোট ছোট গল্পে ভরা আছে তা আমাদের কাছে অকল্পনীয়। মানুষটি আজও আমাদের কাছে রহস্যময় থেকে গেলেন। একটি মানুষ তাঁর জীবনকালে কত কিছু করে গেছেন তা ভাবনার অতীত। সব থেকে বড় কথা তাঁর প্রভাব যে মানুষের মধ্যে কিভাবে আছে তা আজও দেখা যায়। বর্তমানে সিনেমা থেকে বিজ্ঞাপন সব ক্ষেত্রেই তাঁর সৃষ্টিকে মূলধন করে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন পরিচালক থেকে বিজ্ঞাপনদাতা সবাই।