৩০ মে মোদী মন্ত্রীসভার শপথের দিনই ইঙ্গিত মিলেছিল যে নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের (জেডিইউ) সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কের রাশ ক্রমশ আলগা হচ্ছে। তার পর পরই জেডিইউ জানিয়ে দেয় যে বিহারের বাইরে তারা এনডিএ-র শরিক নয়। তবে এবার বিজেপির সঙ্গে চরম সংঘাতের মুখে তারা। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বয়ম সেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) এবং তাদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের গতিবিধির ওপর গোপনে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন নীতিশ। আর তা নিয়েই ফের ঘোরাল হয়ে উঠেছে বিহারের রাজনীতি।
চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার বিতর্কের সূত্রপাত। ওই দিন একটি বিতর্কিত চিঠি সামনে আসে। গত ২৮ মে ওই চিঠিটি লেখেন পাটনা স্পেশাল শাখার তৎকালীন পুলিশ সুপার রাজীব রঞ্জন। তাতে আরএসএস, তাদের ১৮টি শাখা সংগঠন এবং ওই সংগঠনের কর্মীদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, পেশা এবং অন্য জরুরি তথ্য সংগ্রহ করে সদর দফতরে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। সঙ্ঘের যে ১৮টি শাখা সংগঠন সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়, তার মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরঙ্গ দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, ধর্ম জাগরণ সমন্বয় সমিতি, হিন্দু রাষ্ট্র সেনা, মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চ, দুর্গা বাহিনী।
চিঠিটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার পাশাপাশি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই সংগঠনগুলি সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করে পাঠিয়ে দিতে বলা হয়। তাই এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে বিহারের রাজনৈতিক মহলে। সঙ্ঘের ওপর নজর রাখতে নীতীশ কুমারই কি তা হলে নির্দেশ দিয়েছিলেন? উঠছে এমন প্রশ্ন। পাটনা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা এখনও পর্যন্ত চিঠিটিকে উড়িয়েও দেননি, আবার চিঠিতে সঙ্ঘের ওপর নজরদারি চালানোর নির্দেশ পেয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও কোনও মন্তব্য করেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্সপেক্টর জেনারেলের দাবি, ‘রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠন সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা স্পেশাল ব্রাঞ্চের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোনটা কার সংগঠন তাতে কিছু যায় আসে না। বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী এবং রাজনৈতিক সংগঠন সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিই আমরা।’ যদিও বিহার পুলিশের সদর দফতর সূত্রে খবর, গত বছর রামনবমী ঘিরে রাজ্যের একাধিক জেলায় সাম্প্রদায়িক অশান্তি দেখা দিয়েছিল। তার জেরেই এই পদক্ষেপ করা হয়। তবে নজরদারির কোনও ব্যাপার নেই, বরং গোটা ঘটনাকে ‘রুটিন অ্যাফেয়ার’ বলে অভিহিত করেছে জেডিইউ।
যদিও চিঠিটি যে সময় লেখা হয়েছিল, সেই সময় দিল্লীতে দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মোদী। এবং তাঁর মন্ত্রীসভায় জেডিইউয়ের জায়গা হচ্ছে না, তখনই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া এক সময় ‘সঙ্ঘ মুক্ত ভারত’-এর ডাক দেওয়া নীতীশের সঙ্গে সম্পর্ক তেমন ভাল নয় সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতেরও। তাই সেই ক্ষোভ থেকেই সঙ্ঘের ওপর কড়া নজর রাখতে উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল নীতীশ সরকার, এমন কানাঘুষোও শোনা যাচ্ছে।