‘আমার ব্যর্থতা যে গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি। এখনও এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে দেড় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।’ সোমবার লোকসভায় দাঁড়িয়ে ঠিক এভাবেই নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গাডকরি৷ পাশাপাশি এ কথাও জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ভারতের ৩০ শতাংশ ড্রাইভিং লাইসেন্স ভুয়ো। আর মঙ্গলবার তিনি সংসদে বোমা ফাটিয়ে বললেন, সরকারের হাতে টাকা নেই। থাকায় বেসরকারি উদ্যোগে সড়ক নির্মাণ হবে। দেশ জুড়ে চালু হবে ‘লন্ডন পরিবহণ মডেল’। যা নিয়ে ফের বিরোধীদের সমালোচনার মুখে মোদী সরকার।
প্রসঙ্গত, সোমবার সংসদে মোটর ভেহিকলস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯ পেশ করেছেন গাডকারি। লোকসভায় মঙ্গলবার ছিল সড়ক পরিবহণ বিষয়ে ‘ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস’-এর জবাবি ভাষণ। সুদীর্ঘ ভাষণে শাসক-বিরোধী সব পক্ষের মন জয় করার চেষ্টা চালান মন্ত্রী। কিন্তু তাতে চিড়ে ভেজেনি। তৃণমূল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, মোটর ভেহিকলস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯-এর তীব্র বিরোধিতা করা হবে। কারণ রাজ্যগুলির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে। এবং তা রাজ্যের সম্মতি ছাড়াই। যেমন, নতুন আইনে বলা হয়েছে, নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করবেন গাড়ি কোম্পানির ডিলাররাই। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও রাজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। লাইসেন্স দেবে কেন্দ্র সরকার।
এই বিল নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর দাবি, ‘বর্তমানে যেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনর্নবীকরণের জন্য একমাস সময় দেওয়া হত, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সেই মেয়াদ এক বছর করা হয়েছে। অর্থাৎ, এক বছর রাস্তায় গাড়ি চালাবেন লাইসেন্সবিহীন চালক!’ তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা প্রধান জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘রাজ্যের অধিকার কেড়ে নিয়ে সড়ক পরিবহণ বিলে সংশোধনী এনেছে মোদী সরকার। বিজেপি নেতারা মুখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মজবুত করার কথা বললেও, তাদের সরকার গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
এর পাশাপাশি, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে সড়ক পরিবহণ পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে বাংলা তথা পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। লোকসভায় গতকাল ‘ডিমান্ডস ফর গ্রান্টস’ নিয়ে আলোচনার জবাবি ভাষণ দিয়েছেন গাডকরি। সে সময় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছেন। কিন্তু, স্বাধীনতার পর থেকে পূর্ব ভারত বঞ্চিত হয়ে আসছে। পশ্চিম ভারতে যেভাবে সড়ক পরিবহণে অগ্রগতি হয়েছে, পূর্ব ভারতে হয়নি। তাই সরকারের উচিত বাংলা, বিহার, উড়িষ্যাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করা।’