পাখির মতো শূন্যে উড়ে গিয়ে একটা দুরন্ত ক্যাচ তালুবন্দি করে বিশ্বকাপে অভিযান শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস। আর গত রবিবার লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে নাটকীয়ভাবে হারানোর পর আনন্দাশ্রুতে ভেসে গেলেন এই ইংরেজ অল-রাউন্ডার। ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনিই হয়েছেন অপরাজিত ৮৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার সুবাদে। মূলত বেন স্টোকসের অন্তিম মুহূর্তে নায়কোচিত পারফরম্যান্স ইংল্যান্ডকে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ এনে দিয়েছে। স্টোকসে মাতোয়ারা ইংল্যান্ড অধিনায়ক মর্গ্যানও। তিনি বললেন, “ বেন যেন অতিমানব”।
ইংল্যান্ড অধিনায়কের কথায়, ‘‘ফাইনালে আবহ, আবেগের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে পরিস্থিতিকে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মোকাবিলা করেছে বেন। ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছে প্রথম বিশ্বকাপ। যাঁরা রবিবার ঘরে বসে ম্যাচ দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এ বার বেন স্টোকস হতে চাইবেন।
তিন বছর আগে কলকাতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে বেন স্টোকসকে শেষ ওভারে বিশাল কয়েকটি ছক্কা মেরে ইংল্যান্ডের হাত থেকে খেতাব ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কার্লোস ব্রাথওয়েট। যার পরে ক্রিকেট জীবনটাই শেষ হয়ে যেতে পারত বেন স্টোকসের। সেই স্টোকসের হাত ধরেই প্রথম বিশ্বকাপ ধরে তোলার দিনে সে কথা স্মরণ করে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলছেন, ‘‘কলকাতায় তিন বছর আগে যা হয়েছিল, তার পরে বহু ক্রিকেটারের খেলোয়াড় জীবন শেষ হয়ে যেতে পারত। বেনকে বহু বার এ কথাটা আমি বলেছি।’’
বিশ্বকাপ জয়ের দিনে দলের এই গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে কথাও টেনে এনেছেন মর্গ্যান। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিস্থিতি অতিক্রম করে গত কয়েক বছরে বেন এগিয়ে এসেছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য ও অসাধারণ। ও একজন অতিমানব। ও প্রায় একার কাঁধে দল আমাদের ব্যাটিং বিভাগকে এই বিশ্বকাপকে ফাইনালের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে।’’ বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘জস বাটলারের সঙ্গে স্টোকসের জুটি অসাধারণ। কিন্তু শেষের দিকে যে মেজাজে বেন ব্যাট করে গেল, তা অবিশ্বাস্য। ব্যাট করে ক্লান্ত, অবসন্ন ও ঘর্মাক্ত অবস্থায় ম্যাচ টাই হওয়ার পরেও সুপার ওভারে গিয়ে ব্যাট করেও দলের রান তুলল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এর আগেও অনেক বার বেন দলের দুঃসময়ে একাই একশো হয়ে আমাদের ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, দলের মিটিং বা অনুশীলনের সময় স্টোকস নানা পরামর্শ দেয়। আর ফাইনালে দিনটা ছিল বেনের। একাই লড়ে কাপটা আমাদের দিল। তার জন্য ওকে বড়সড় একটা ধন্যবাদ দিতেই হচ্ছে।’’
লর্ডসে এই অবিশ্বাস্য ক্লাইম্যাক্সের পর বেন স্টোকস আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না এই অনুভূতি। গত চার বছরের পরিশ্রমের ফল পেলাম। এর মধ্যে আমার ক্রিকেটজীবনের অনেক উত্থানপতন ঘটেছে। রবিবার ক্রিজে আসার পর থেকেই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, শেষ অবধি উইকেটে টিকে থাকব।’ এই প্রসঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন জানান, ‘ক্রিকেটের তিন বিভাগেই বেন স্টোকস নিজের দক্ষতা এই বিশ্বকাপে প্রমাণ করেছে। ও ইংল্যান্ড দলের বহুমূল্য সম্পদ। আগামী দিনের ইংরেজ ক্রিকেটারদের কাছে আইডল।’