জয় শ্রী রাম ধ্বনি তুলে গোটা বাংলায় যেভাবে সন্ত্রাস জারি করছে গেরুয়া শিবির তার তীব্র নিন্দা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন৷ এবার তিনি আরও স্পষ্ট ভাবে ব্যক্ত করলেন তাঁর মনোভাব৷
অমর্ত্য জানালেন, ‘জয় শ্রীরাম’ উক্তি করলেন না বলে লোককে মারা হল, খুন করা হল, তাতেই আমার আপত্তি। ‘জয় শ্রীরাম’ কথাটা চলমান বাংলা ভাষার মধ্যে খুব পড়ে না, এটা বলাই যায়— কিন্তু, পড়ে না বলে তা যোগ করা যাবে না, এটা আমি বলছি না। কিন্তু যোগ করার কারণ যদি এই হয় যে, এই বুলির সাহায্যে লোককে মারা যাবে, বিশেষত মুসলমানদের, তা হলে তো আপত্তি করার নিশ্চয় কারণ থাকবে। তাই, প্রশ্নটা এই নয় যে নতুন শব্দ বাংলা ভাষায় চলবে কি না, সারা ক্ষণই তো তাই চলছে— প্রশ্নটা হচ্ছে এই যে, কী কারণে এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে এই পরিবর্তনটা করা হচ্ছে, এবং সেই পরিবর্তনের ফলে লোকে যদি মার খায়, আহত হয়, মারা যায়, তা হলে আমাদের আপত্তি করার কারণ আছে কি না। আমার ধারণা, খুবই আছে। এটার সঙ্গে ভাষায় নতুন শব্দ যোগ করা চলবে না, এ রকম কোনও বক্তব্য আমার আগেও ছিল না, এখনও নেই।
ভারতে এখন সর্ব ক্ষণ একটা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, ভয়ের পরিবেশ রয়েছে, তা যে দাঙ্গার চেয়েও বিপজ্জনক তাই মনে করছেন তিনি৷ তিনি জানাচ্ছেন,’দাঙ্গার থেকে মারাত্মক আরও বেশি কিছু আছে, তেমনটা বলতে পারব না। আরও খারাপ কিছু হতে পারে, সেটা অসম্ভব নয়, কিন্তু সে প্রচণ্ড বীভৎসতার কথা আমার পক্ষে ভাবা সহজ নয়। তবে এটা ঠিকই যে দাঙ্গা হচ্ছে না বলে আমাদের খুব খুশি থাকার কারণ আছে, সেটা একেবারেই সত্যি নয়। দাঙ্গা হচ্ছে না, হয়তো হবেও না। কিন্তু কাউকে নির্যাতন করা, কে কী খাচ্ছে না খাচ্ছে সেটা দেখা, এবং তা নিয়ে মারধর করা, তাদের বলা যে এটা করো ওটা করো না, আর না করলেই খুন করে দেওয়া, এর মধ্যে যে একটা বীভৎসতা আছে, সেটা দাঙ্গার সঙ্গে তুলনীয় না হলেও একটা খুবই অসহ্য জিনিস। অসহ্য ব্যবহার সহ্য করা মানবিক সভ্যতার পরিচয় দেয় না’।
অমর্ত্য আরও জানাচ্ছেন, ‘বিজেপি নেতৃত্ব তো প্রকৃতপক্ষে দলিতদের কোনও মর্যাদা দিতে চাননি। কিন্তু যখন একটা রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধ চলছে, তখন তাঁরা সহজেই এই বিভেদটাকে ব্যবহার করেছেন। এই ব্যবহার করার সুযোগটা বাঙালি সংস্কৃতির, বাঙালি সভ্যতার নানা রকম বিভাজনের সঙ্গে যুক্ত বলে আমার ধারণা’।
তাঁকে নিয়ে সমালোচনার প্রত্যুত্তরে তিনি জানালেন, ‘আমাকে যাঁরা এখন সমালোচনা করছেন, তাঁদের মধ্যে এক জন বললেন যে, আমরা নাকি ভয় পেলে ‘রাম রাম’ বলি। এটা এখনও অবধি আমার অভিজ্ঞতায় আসেনি, কিন্তু নিশ্চয় তাঁর অভিজ্ঞতায় আছে। তিনি নিশ্চয় ভয় পেলে ‘রাম রাম’ বলেন। এবং, তাঁর সঙ্গে দেখা হলে যদি দেখি যে তিনি ‘রাম রাম’ বলছেন, তবে আমি আন্দাজ করতে পারব যে তিনি কোনও কারণে একটু ভয় পেয়ে গেছেন’!