দেশের বিভিন্ন জায়গা, এমনকী এই বাংলাতেও ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান হয়ে উঠেছে প্রহারের মন্ত্র। জয় শ্রীরাম বলতে আপত্তি জানালেই জুটছে ‘ভক্তদের’ হাতে বেধড়ক মার। আর এই পরিস্থিতিতেই মুখ খুলেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। দিন কয়েক আগেই শহরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতীচী ট্রাস্টের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে তিনি বলেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগান বাংলার সংস্কৃতি নয়। এসব ইদানীংকালের আমদানি। লোককে প্রহার করতে হলে এখন এ সব বলা হচ্ছে।’ বিজেপির জয় শ্রীরামের মোকাবিলায় এবার অমর্ত্য সেনের এই বক্তৃতাকেই হাতিয়ার করছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রতিটি পুরসভাকে ‘জয় শ্রীরামে’র পাল্টা প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। চলতি সপ্তাহেই ই-মেল মারফৎ এই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। জানানো হয়েছে প্রচারের বিস্তারিত রূপরেখা।
এ রাজ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান সামনে এসেছে লোকসভা ভোটের সময় থেকে। ভোট প্রচারে বেরিয়েও এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘জয় শ্রীরাম বাংলার সংস্কৃতি নয়। পাঁচ বছরে যারা একটা রামমন্দির পর্যন্ত বানায়নি, তারা আবার রামকে নিয়ে বড় বড় কথা বলে! রামের নামে ব্যবসা করে এরা। আমি বন্দেমাতরমে বিশ্বাস করি, জয়হিন্দে বিশ্বাস করি, মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করি, কিন্তু বিজেপির ওই জয় শ্রীরাম স্লোগানে বিশ্বাস করি না। রামকে অবশ্যই মানি, ভক্তি করি। কিন্তু রামের নামে যারা তোলাবাজি করে, তাদের ভরসা করি না।’ কিন্তু তারপরও মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে এই স্লোগান তুলে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হলে একাধিকবার গাড়ি থেকে নেমে এই প্রতিবাদ করেছেন তিনি। এ নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির নীচের তলার কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে বিরোধ বেধেছে দিকে দিকে।
এই চাপানউতোরে মধ্যেই সম্প্রতি কলকাতায় এসে রাজ্যজুড়ে জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে লাগামছাড়া হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অমর্ত্য সেন। ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান নিয়ে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘জয় শ্রীরাম স্লোগান আগে কখনও শুনিনি। ইদানীং প্রহারের জন্য ওই স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে। যেখানেই এই স্লোগান শোনা যাচ্ছে সেখানেই বেধড়ক মারধর খাচ্ছেন মানুষ। এই সংস্কৃতি বাংলার সংস্কৃতি নয়।’ বিজেপিকে বিঁধে তিনি এ-ও বলেন যে, ‘এতদিন বাংলায় ধুমধাম করে রামনবমী পালন হত না তো। বিশেষ একটি দলের কল্যাণে এখন সেটাও হচ্ছে।’ অমর্ত্যের এই মতকেই এবার বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে আনতে চাইছে রাজ্য সরকার। নগরোন্নয়ন দফতরের তরফে পুরসভার প্রধানদের বলা হয়েছে, নোবেলজয়ীর ছবিসহ তাঁর অভিমত ফ্লেক্সে ছেপে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে দিতে হবে। অমর্ত্যের ছবি ও বক্তৃতার নির্দিষ্ট অংশও পুরসভাগুলিকে পাঠান হয়েছে।