মিলছে না কেন্দ্রীয় বাজেট ও আর্থিক সমীক্ষার রাজস্ব আয়ের অঙ্ক! দুই সরকারি হিসেবই দিচ্ছে আলাদা আলাদা তথ্য। এবং গড়মিলের পরিমাণ এক-দু’টাকা নয়, প্রায় ১.৭ লক্ষ কোটি! এ হেন কেলেঙ্কারির খবর সামনে আসতেই ফের নতুন করে অস্বস্তিতে মোদী সরকার। কারণ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে অস্বস্তিতে ফেলে বাজেটের তথ্যে বড় রকমের গরমিল থাকার অভিযোগ তুলেছে সংশ্লিষ্ট মহল। আর এই পরিস্থিতিতে মুখে কুলুপ এঁটেছে মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হিসেব-নিকেশে ধরা পড়েছে, গত অর্থবর্ষে কেন্দ্রের রাজস্ব আয়ের অঙ্ক বাজেট ও আর্থিক সমীক্ষায় আলাদা। এক-দু’টাকা নয়, দুইয়ের ফারাক প্রায় ১.৭ লক্ষ কোটি। আলাদা হিসেব সরকারি খরচেও। তফাত প্রায় ১.৪৫ লক্ষ কোটি। এমনকি ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পা রাখার যে স্বপ্ন ফেরি করছেন মোদী, তাতেও ধোঁয়াশা খুঁজে পাচ্ছেন একাংশ।
তাঁদের দাবি, অর্থ মন্ত্রক ও নীতি আয়োগ যখন বলছে ওই লক্ষ্য ছুঁতে বছরে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি জরুরি, তখন আর্থিক সমীক্ষার বার্তা চলতি অর্থবর্ষে তা ৭ শতাংশ ছোঁবে। অর্থ মন্ত্রকের পূর্বাভাস, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ সালে ওই হার দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে ৭.৩ শতাংশ ও ৭.৫ শতাংশ। মঙ্গলবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বাজেটের হিসেবে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরাও। তাদের প্রশ্ন, এভাবে গরমিল দেখিয়ে কি ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছনো সম্ভব?
প্রসঙ্গত, হিসেবের গরমিল নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, অর্থনীতিবিদ রথীন রায়। আর এবার প্রশ্ন তুললেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপিকা জয়তী ঘোষ। তাঁদের সংশয়ের জায়গা হল, আর্থিক সমীক্ষা যেখানে গত অর্থবর্ষে সরকারের রাজস্ব আয় ১৫.৬ লক্ষ কোটি টাকা দেখিয়েছে, সেখানে বাজেটে তার সংশোধিত হিসেব ১৭.৩ লক্ষ কোটি। বাজেটে সরকারি খরচের সংশোধিত হিসেবের থেকে আর্থিক সমীক্ষায় প্রকাশিত হিসেবও প্রায় ১.৪৫ লক্ষ কোটি কম।
জয়তীর বক্তব্য, তার মানে বাজেটে খরচ কমানো হয়েছে। কারণ, আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী রাজকোষ ঘাটতি প্রায় ১১ হাজার কোটি বাড়ে। চলতি বছরে রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যও ছাপিয়ে যায় ২৫ শতাংশ। ৯ শতাংশ প্রকৃত জিডিপির বৃদ্ধি নিয়ে যা কার্যত অসম্ভব। এ নিয়ে কংগ্রেসের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার তোপ, ‘আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি, কণ্ঠরোধ, মেরুকরণের বিশেষজ্ঞরা এবার পরিসংখ্যানের কারচুপিতেও বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে।’ স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় ব্যাকফুটে মোদী সরকার।