আজ ম্যানচেস্টার না মুম্বই? কোথায় সেমিফাইনাল খেলতে নামছে ভারত? এই প্রশ্ন এলে উত্তর গুলিয়ে যেতেই পারে।
ম্যানচেস্টারে সিটি সেন্টারের আশেপাশে প্রচুর ভারতীয় রেস্তরাঁ। আমিষ, নিরামিষ— সব ধরনের খাবারই পাওয়া যায়। সেখানে দু’দিন ধরেই নীল জার্সির ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। সোমবারেই বিরাটদের নীল জার্সি পরে রাস্তায় নেমে পড়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট-ভক্তেরা। বিশ্বকাপ চলাকালীন যত দিন যাচ্ছে, এই নীল জার্সি যেন জাতীয় পোশাকে পরিণত হয়েছে।
বিরাট এর মধ্যে এক দিন বলছিলেন, ‘‘তিন টাকার বড়া পাও খেতাম প্র্যাক্টিস শেষে। এখন বাসে করে রাজার মতো আসি। তার পরে ট্রেনিং সেরে আবার এসি বাসে করে পাঁচতারা হোটেলে ফিরে যাই। যে-পথটা পেরিয়ে এসেছি, তা সব সময় মাথায় রাখার চেষ্টা করি আমি। সেই কারণেই কখনও কোনও কিছুকে নিশ্চিত বলে ধরে নিই না।’’
জাতীয় ক্রিকেট দল সেমিফাইনাল খেলতে নামছে। জাতীয় পোশাক গায়ে উঠে গিয়েছে। তা হলে ‘জাতীয় খাদ্য’ আর দূরে থাকে কেন? সিটি সেন্টার সংলগ্ন একটা রেস্তরাঁয় ঢুকে যা মেনু দেখা গেল, ভারত অধিনায়ক খুব খুশি হতেন। বড়া পাও, পাও ভাজি দুই-ই পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও রয়েছে উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতীয় বিশেষ বিশেষ নিরামিষ খাবারের লোভনীয় সব পদ।
ভারত অধিনায়কের যদি ছোটবেলার ক্রিকেট শিক্ষার সরণি ধরে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়, ম্যানচেস্টার নাচতে নাচতে ব্যবস্থা করে দেবে। সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন স্ত্রী অনুষ্কাকেও। প্লেটে বড়া পাও সাজিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রেস্তরাঁ তাঁর প্রেমিক-মনে দোলা লাগিয়ে গানও বাজিয়ে দেবে, ‘মেরে সপনো কি রানি কব আয়েগি তু’। হ্যাঁ চিত্রটা এমনই৷ দেখে বোঝা দায় বিশ্বকাপ দেশে চলছে নাকি বিদেশে!
গতকাল ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী আইসিসি-কে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে উচ্ছ্বসিত ভাবে বলছিলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই জানতাম, রোহিত বিশ্বের সেরা ওয়ান ডে ক্রিকেটারদের এক জন। কিন্তু বড় ক্রিকেটার সে-ই, যে বড় মঞ্চে ভাল খেলে দেখায়। রোহিত সেটাই করে দেখাচ্ছে। বিশ্বকাপে পাঁচটা সেঞ্চুরি অভাবনীয়। আশা করব, আরও দু’টো ভাল দিন রয়েছে ওর জন্য।’’
প্রার্থনা এখন বাকি দু’দিনের জন্য। নিউজ়িল্যান্ডকে হারাতে পারলে ফাইনাল। তার পরে লর্ডসে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর ডাক। তিরাশিতে লর্ডসের ব্যালকনিতে কাপ হাতে দাঁড়ানো কপিল দেবের সেই বিখ্যাত ছবি। বিরাটের তখন বয়স? জন্মানইনি। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পাঁচ বছর পরে পৃথিবীর আলো দেখেন এখনকার অধিনায়ক।কপিলের কাপ জয়ের দলের এক সদস্য এ বারেও বিরাটদের ড্রেসিংরুমে উপস্থিত। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী।
নিউজ়িল্যান্ডকে নিয়ে চার দিকে যেমন একটা আবহ তৈরি হয়েছে যে, হেলায় ফাইনালে চলে যাবে ভারত, তা নিয়ে সাবধান করে দেওয়ার আদর্শ লোক শাস্ত্রী। তিরাশির কাপ জয়ের ইতিহাসকে টেনে তিনি নিশ্চয়ই সতর্ক করে দিতে চাইবেন বিরাটদের যে, ‘‘ক্রিকেটে সব সময় ফেভারিট জেতে না। আন্ডারডগরা অনেক হিসেব ওলটপালট করে দিয়ে যেতে পারে। আমরা যেমন সকলকে বোকা বানিয়ে লয়েডের স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিলাম।’’
কোহলির সাংবাদিক বৈঠকে উপচে পড়া ভিড়। দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত নেই। নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের সময় আবার সেনসেক্স পড়ার মতোই ঝুপ করে সংখ্যাটা নেমে গেল। উইলিয়ামসনের হাবভাব দেখে মনে হল, আন্ডারডগ তকমা পেয়ে বেশ খুশিই। যত চাপ তো বিরাটদের উপরেই। এগারো বছর আগের এক ফাইনালে তাঁদের দেশকে এ-রকমই একটা সেমিফাইনালে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোহলি এবং কেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ নিয়ে দু’জনেই বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন আজ। সে-বার উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কোহালির ভারত।
এ বারেও কাপ জয়ের লক্ষ্য কোহলির দলে এমনই নেশার মতো ছড়িয়ে পড়েছে যে, ব্যক্তিগত কীর্তিতে কেউ আর বুঁদ হচ্ছেন না। রোহিত আগের দিনই বলেছেন, পাঁচটা সেঞ্চুরির তখনই মূল্য থাকবে, যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন। কোহলি আজ একই সুরে জানিয়ে দিলেন, তাঁর কোনও সেঞ্চুরি না-থাকায় আক্ষেপ নেই। রোহিত সব সেঞ্চুরি করে দেওয়ায় বরং তিনি অধিনায়ক হিসেবে খুশি। ‘‘রানটা কার ব্যাট থেকে এল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল হল, দলের কতটা কাজে আসতে পারলাম। আমি আমার ভুমিকা নিয়ে খুশি। আরও খুশি রোহিতের স্বপ্নের ফর্ম দেখে। আশা করব, আরও দু’টো ভাল দিন যাক ওর।’’ সেই আরও দু’টো দিনকে ঘিরে প্রার্থনার সুর।