একদিকে যখন দেশ জুড়ে তথ্যসুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সরব হচ্ছেন মানুষ, তখন পেছনের দরজা দিয়ে দেশের সকল ছাত্রছাত্রীদের ওপরে নজরদারি চালানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার।
হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গোটা দেশের ৩ কোটি উচ্চ শিক্ষারত ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কেন্দ্রের নির্দেশ, উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এমন প্রায় ৩ কোটি ছাত্রছাত্রী তাঁদের ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট এবং হ্যান্ডেলগুলি মন্ত্রকের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করুন।
একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কেন্দ্র নাকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের ভালে কাজের হাল-হকিকত সবার নজরে আনতে চায়। তবে মোদী সরকারের এই উদ্যোগ ঘিরে ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে সন্দেহ, ক্ষোভ। কারণ অনেকে এটাকে ছাত্রছাত্রীদের ওপর নজরদারি করার কৌশল বলে মনে করছেন। সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ‘মারাত্মক’ আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষাবিদদের একাংশও।
তাঁদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রছাত্রীদের মতামতে সরকারের প্রশংসার সঙ্গে সমালোচনাও থাকে। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য এমনটাই কাম্য। কিন্তু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা হলে ভবিষ্যতে চাকরিজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে ফ্যাকাল্টি ইন্টারভিউয়ে প্রার্থীকে তাঁর ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে সরকার-বিরোধী পোস্টের জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার এক চিঠিতে দেশের ৯০০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪০,০০০ কলেজের উদ্দেশে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব আর সুব্রহ্মণ্যম অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন তাঁদের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট যুক্ত করেন। সেইসঙ্গে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রকের অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও নিজেদের যুক্ত করেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘যোগাযোগ বৃদ্ধির এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের দিকগুলি প্রচার করা। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মীকে ’সোশ্যাল মিডিয়া চ্যাম্পিয়ন’ (এসএমসি) পদে নিয়োগ করতে হবে। সেই এসএমসি-ই প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুলবেন এবং সেগুলি নিয়মিত পরিচালনা করবেন।’
মন্ত্রকের সচিবের চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এই এসএমসিদের যাবতীয় তথ্যাদি অল ইন্ডিয়া সার্ভে অব হায়ার এডুকেশনের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসিকে সপ্তাহে অন্তত একবার ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রছাত্রীদের সাফল্য এবং ‘ভাল কাজ’–এর বিষয়গুলি অন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এ নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে বিরোধীরা। মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে তৃণমূলের দাবি, যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তা ভয়াবহ। ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব অ্যাকাউন্টকে সরকারের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা হলে আরও বেশি নজরদারি করবে সরকার। ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হবে। সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করে ফ্যাসিবাদকে মজবুত করতে চাইছে মোদী সরকার।