এ বছর উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে ঝাড়গ্রামের রামকৃষ্ণ মিশন পরিচালিত একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের লোধা, শবর, ভূমিজ, সাঁওতাল-সহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা। এইসব ছাত্রছাত্রীর নজরকাড়া ফলাফলের খবর পেয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্য সচিব, আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের সচিবেরাও। এই স্কুলে চালু হয়েছে একটি আধুনিক মানের গ্রন্থাগার। গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করেন রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব বিজন মণ্ডল।
এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল এই স্কুলের ২২ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে ১৩ জন ছাত্র ও ৯ জন ছাত্রী। ছাত্রদের মধ্যে ১২ জন প্রথম বিভাগে ও একজন দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেছে। রামকৃষ্ণ মিশন ঝাড়গ্রাম শাখার সম্পাদক স্বামী শুভকরানন্দ বলেন, ‘দ্বিতীয় বিভাগে যে ছেলেটি পাশ করেছে সে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল।’ ছাত্রীদের ৯ জনই প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। আদিবাসী ছাত্রদের মধ্যে ভূধর মাহালি পেয়েছে সর্বোচ্চ ৪২১ নম্বর। আদিবাসী ছাত্রীদের মধ্যে সোমবারি সোরেন পেয়েছে সর্বোচ্চ নম্বর ৩৯৮ নম্বর। এদের মধ্যে ৯ জন ছাত্রছাত্রী সাঁওতালি প্রথম ভাষা ও বাকিরা বাংলা প্রথম ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছিল। ছাত্রদের মধ্যে ৫ জন ও ছাত্রীদের মধ্যে ৩ জন স্টার পেয়েছে। স্বামী শুভকরানন্দ বলেন, ‘এই সাফল্য বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের প্রচেষ্টায় এসেছে। সফল হওয়া ছাত্রছাত্রীরা লোধা, শবর, ভূমিজ, সাঁওতাল-সহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। কৃতীদের দু’জন লোধা সম্প্রদায়ের। এতে আরও একবার প্রমাণিত হল ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা পেলে ‘একলব্য’রাও সব্যসাচী হয়ে উঠতে পারে।’ কৃতী আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই বিদ্যালয়ের প্রথম ৮ জনের নম্বর ৮৪.২ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশের মধ্যে। এরা হল- ভূধর মাহালি (৪২১), সোমবারি সোরেন (৩৯৮), সুরজ মল্লিক (৩৯৮), শিখা সিং (৩৮৮), সেরমা মান্ডি (৩৮৫), সুব্রত হাঁসদা (৩৮৫),পলাশ মল্লিক (৩৮০) ও দেবাতি সোরেন (৩৭৫)।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর উদ্যোগে দু’বছর আগে ঝাড়গ্রামের সত্যবানপল্লী এলাকায় একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয়ের পরিচালনভার পায় রামকৃষ্ণ মিশন। গত বছরও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে উদয় মুর্মু ৮৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে সাঁওতালি ভাষার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রাজ্যে প্রথম হয়। বিদ্যালয়ের পিছিয়ে-পড়া সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আধুনিক মানের একটি গ্রন্থাগারের দরজা খুলে দেওয়া হয়। স্বামী শুভকরানন্দ সাংবাদিকদের জানান, আগে এই গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০০। এখন বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন পরিকাঠামোয় বৈচিত্র্য আনার সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪,৮০০। গ্রন্থাগার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন, অতিরিক্ত জেলাশাসক টি বালাসুব্রহ্মণ্যম, মহকুমা শাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো, স্বামী শুভকরানন্দ প্রমুখ।