বর্তমানে আর্জেন্টিনার নাম করলেই চলে আসে কিছু পরপর কিছু নাম ও ঘটনা। প্রথম নামটাই হল লিওনেল মেসি। আর তাঁর সঙ্গে আসে এক ব্যর্থতার গল্প। দেশের জার্সি গায়ে অসফল নেতার গল্প। বিশ্বের দরবারে দেশকে তুলে ধরতে না পারার গল্প। আর আসে ফুটবলের ‘হ্যান্ড অফ গড’ দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে এক অকল্পনীয় তুলনা। নতুন প্রজন্মের কাছে মেসি আদর্শ হলেও অভিজ্ঞ মানুষের কাছে দেশের হয়ে অযোগ্য।
১৯৯৩ সালে শেষবার কোপা আমেরিকা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। তারপর টানা ২৬ বছরে শুধুই ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক কোনো সম্মানই জোটেনি আর্জেন্টিনা ভাগ্যে। বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ভক্ত বারবার নিরাশ হয়েছে, মনের মধ্যে চেপে রেখেছে দুঃখ। আর দেশের জার্সি গায়ে মেসি চারটি কোপা আমেরিকা ফাইনাল ও একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেললেও একবারও বিশ্বসেরা হতে পারেন নি। সত্যিই যে মেসিকে দলনেতা হিসেবে ভাবা যায় না, বারবারই তা প্রমাণ করে দিচ্ছেন তিনি নিজেই। এমনকী এ-ও শোনা যায় যে ম্যাচের আগে মানসিক চাপ সামলাতে না পেরে বারবারই টয়লেটে ছোটেন তিনি। যা কখনই অধিনায়কচিত নয়। আর আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে কে বেশি সফল এ বিচার করতে গেলে তো মারাদোনার কাছে কয়েকশো গোল খাবেন মেসি। কারণ মারাদোনার নামের পাশে আজীবন উজ্জ্বল করবে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার ইতিহাস আর মেসির নামের পাশে থাকবে দেশের হয়ে ব্যর্থতার ইতিহাস।
২০১৪ রাশিয়া বিশ্বকাপে মূল পর্বে তোলার পিছনে মেসির অবদান থাকলেও আসল মঞ্চে তাঁকে তাড়া করেছে শুধুই ব্যর্থতা। একের পর এক গোল মিস। এমনকি ফাইনালেও ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপের পর তাই নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন মেসি। আন্তর্জাতিক শিরোপার লুকোচুরি কি স্রেফ ভাগ্যেরই লীলাখেলা, নাকি আলবিসেলেস্তেদের জার্সি গায়ে মেসির গড়পড়তা মানের পারফরমেন্স? চলতি কোপা আমেরিকাতে মাঠে নেমেছেন ৩২ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। কিন্তু আন্তর্জাতিক শিরোপার ভাগ্য যেন মেসির ক্ষেত্রে হচ্ছে ট্রায়াঙ্গল মুভির সময়ের লুপের মত। প্রতিটি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বড় ধরনের আশা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত তা হতাশায় রূপান্তর করা মেসি ও আর্জেন্টিনার জন্য নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু সারা বছর বার্সেলোনা জার্সি গায়ে যখন মাঠে নামেন তখন যেন আলাদা মেসি হয়ে নামেন। সাফল্যও আসে। সেখানেই জাগে প্রশ্ন। মেসিকে আকাশী-সাদা জার্সিতে কেন ভয়ঙ্কর দেখেন না ভক্তরা? পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে দুইটি মেসি-রূপ দেখে এসেছে ভক্তরা। একজন মেসির নাম্বার নাইন কিংবা টেন হয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে ভেঙ্গেচুরে এগিয়ে যাওয়া। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব, কোচ ও সেরা খেলোয়াড়দের পাশে পেয়ে দুর্নিবার হয়ে উঠা সেই মেসি বার্সেলোনার। অন্যদিকে টালমাটাল, গোলমেলে ও অস্বস্তিকর আর্জেন্টিনার শিবিরের মেসি, যেখানে এসে গোলমুখে ক্যারিয়ার সেরা ফর্মে থাকাকালীন অবস্থায়ও ২০০৯ ও ২০১১ সালে দুই বছর কোনো গোলের মুখ দেখেননি তিনি।
আপাতত সকলের নজর এক দিকেই, ফের কবে দেশের জার্সিকে বিদায় জানাতে অবসরের কথা ঘোষণা করেন মেসি। সামনের মাস থেকেই তো লা লিগা শুরু। তাই এবার ক্যাম্প ন্যু’তেই মনোনিবেশ করতে হবে যে! কারণ এইবারের কোপা আমেরিকাতেও যে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ব্রাজিলের কাছে বিদায় ঘটেছে। তাই দেশের জার্সি গায়ে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক সন্মান অধরাই থেকে গেল লিওনেল মেসির।