কখন ‘কঠোর’ অবস্থান নিতে হয়, আর কখন ‘উপেক্ষা’ করতে হয়, তা ভাল মতোই জানেন দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কখনও বিজেপির গুণ্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি, কখনও বা তৃণমূল নেত্রী হয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেছেন মারমুখী বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। তবে এবার প্রচারে আসতে চাওয়া ‘ভক্ত’দের দিকে স্রেফ উপেক্ষা ছুঁড়ে দিলেন অভিজ্ঞ মমতা। গতকাল ‘জয় শ্রীরাম’ শুনেও তাঁর নির্বিকার থাকা দেখে চমকে গিয়েছে পর্যবেক্ষক মহল।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুরের মাহেশে রথ টানতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। রথের রশিতে টান দেওয়ার জন্য যখন তিনি অপেক্ষা করছেন, তখনই কিছু লোক তাঁকে শোনানোর উদ্দেশ্যে বার কয়েক ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেন। মুখ্যমন্ত্রীর কানে যে ওই ধ্বনি পৌঁছেছে, তা হলফ করে বলা যায়। তবে তারপরও তাঁকে ওই ‘ভক্ত’দের তেমন আমল দিতে দেখা যায়নি। অথচ মাসখানেক আগেও ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে বাংলায়।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোট-পর্ব থেকেই বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ রাজনীতির বিরোধীতা করেছেন মমতা। ভোটের প্রচারে বেরিয়ে তিনি বলেছিলেন, “জয় শ্রীরাম বাংলার সংস্কৃতি নয়। আমরা বলব, ‘জয় হিন্দ-জয় বাংলা-বন্দেমাতরম।’ পাঁচ বছরে যারা একটা রামমন্দির পর্যন্ত বানায়নি, তারা আবার রামকে নিয়ে বড় বড় কথা বলে! রামের নামে ব্যবসা করে এরা। আমি বন্দেমাতরমে বিশ্বাস করি, জয়হিন্দে বিশ্বাস করি, মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করি, কিন্তু বিজেপির ওই জয় শ্রীরাম স্লোগানে বিশ্বাস করি না। রামকে অবশ্যই মানি, ভক্তি করি। কিন্তু রামের নামে যারা তোলাবাজি করে, তাদের ভরসা করি না।”
কিন্তু ভোটের ফলপ্রকাশের পর আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠা গেরুয়া শিবির তাঁর গাড়ি থামিয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ায় ভাটপাড়া, নৈহাটি অঞ্চলে একাধিকবার গাড়ি থেকে নেমে পড়েছেন ক্ষুব্ধ মমতা। বিজেপির এ হেন তাণ্ডবে মেজাজ হারিয়েছেন। এবং উল্টো দিকে মমতার অভিযোগকে সত্যি করেই রাজ্য বিজেপিও ক্রমশ ‘জয় শ্রীরাম’কে রাজনৈতিক স্লোগানে পরিণত করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখলেই তাঁকে ‘উত্যক্ত’ করার অস্ত্র হিসেবে এই স্লোগান ব্যবহার করতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির।
তবে সেই ধারা বজায় রেখে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান ভেসে এলেও তাঁকে বিন্দুমাত্রও আমল দেননি তিনি। মমতার এই ‘নির্বিকার’ থাকাকে নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারও কারও প্রশ্ন, প্রশান্ত কিশোর রাজ্যে আসার পরেই কি মমতার এই পরিবর্তন? তবে সকলেরই এক বক্তব্য, বিচক্ষন মমতা বুঝেছেন, তিনি নিজে যদি এই স্লোগানে আর আমল না দেন, তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই গেরুয়া শিবিরের অস্ত্রটি ভোঁতা হয়ে যাবে। সেই কারণেই ‘জয় শ্রীরাম’ শুনেও এবার আর বিচলিত হচ্ছেন না তিনি।