ক্ষমতায় এসেই কৃষি ও শিল্পের মতো রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকেও খোলনলচে বদলে ফেলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা জমানায় এমআরআই, ডিজিটাল এক্স-রে, সিটি স্ক্যানের মতো পিপিপি মডেলের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক পরিষেবা বাবদ আয়ও বেড়েছে আগের থেকে। তবে সরকারি হাসপাতালগুলির রোগীকল্যাণ সমিতি বা আরকেএস-এর আর্থিক দুর্বলতা কাটাতে তবুও তা যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু এমনই সন্ধিক্ষণে মাত্র ১৬টি শয্যায় পরিষেবা দিয়ে যে পৌনে দু’কোটি টাকা রোজগার করা যেতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ড। ঝাঁ-চকচকে পরিষেবা মেলায় টাকা খরচ করেও খুশি মধ্যবিত্ত রোগী ও তাদের পরিজন।
নবান্ন ও স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের ব্যাখ্যা, মূলত সেই কারণেই উডবার্ন মডেল মনে ধরেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাই গত সোমবার ডক্টর্স ডে-তে এই মডেল রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনসমক্ষে জানিয়ে দেন তিনি। এসএসকেএমে এই মডেলে আগামী দিনে ২০০ শয্যার ‘পেয়িং’ পরিষেবা চালু করার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যকর্তাদের নির্দেশও দেন, রাজ্যের বাকি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও জেলাস্তরের হাসপাতালগুলিতেও চত্বরের ভিতরে বা ঠিক বাইরে সংলগ্ন জায়গায় যেখানে যেখানে স্থানসঙ্কুলান হবে, সেখানেই বেসরকারি পরিচালনায় একই রকম পরিষেবা চালু করতে হবে ।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘এসএসকেএমের ক্ষেত্রে জায়গা চিহ্নিত হয়েই গিয়েছে। ইমার্জেন্সির সামনে যেখানে এখন কলকাতা কালেক্টরেটের অফিস, সেখানেই মাথা তুলবে ভবনটি। পূর্ত দফতরকে নতুন ভবনের নকশা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্যভবনের আমলা-আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, শুধু এসএসকেএম-ই নয়, প্রস্তাবিত ব্যবস্থায় ব্যাপক আর্থিক পুষ্টি পাবে অন্য সব সরকারি হাসপাতালগুলির আরকেএস-ও। পাশাপাশি উপকৃত হবেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত জনতার সেই অংশ, যাঁরা সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ মেনে নিতে পারেন না, আবার বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়ভার বইতেও অক্ষম।
স্বাস্থ্য দফতরের উপ-সচিব পদমর্যাদার এক আমলা বলেন, ‘আগে মেডিক্যাল কলেজস্তরের হাসপাতালগুলিতে আরকেএসের বার্ষিক আয় ছিল গড়ে সাড়ে তিন-চার কোটি টাকা। সব পরিষেবা ফ্রি করে দেওয়ার পর সেই আয় মুখ থুবড়ে পড়ে। শুধুমাত্র আউটডোরের টিকিট বাবদ বছরে মাত্র ৮-১১ লাখ টাকা আয় হয়।’ আসলে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা থেকে শুরু করে জরুরি ভিত্তিতে যে কোনও খাতে এককালীন খরচ বাবদ বছরে কমপক্ষে দু’ কোটি টাকার খরচ হয়েই যায় যে কোনও আরকেএসের। অথচ আয়ের সংস্থান নেই। এখন পিপিপি ডায়গনস্টিক পরিষেবার মাধ্যমে সেই শূন্যস্থান অনেকটা পূরণ হয়েছে। সে জন্যই উডবার্ন মডেলকে সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রীর।
উডবার্ন মডেল যে সফল, তার ব্যাখ্যায় এসএসকেএমের এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, ৪০ শয্যার নবনির্মিত উডবার্নের জন্য ৬.১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৮-র মে থেকে ১৬টি কেবিন-শয্যা চালু হয়ে গিয়েছে। এর জন্য ৩.৪০ কোটি টাকা খরচ হয়। এবং ২০১৮-র জুন থেকে চলতি বছর জুন পর্যন্ত কেবিন ভাড়া বাবদ এসএসকেএমের আরকেএস ভাঁড়ারে অন্তত ১.৭৭ কোটি টাকা ঢুকেছে আয় হিসেবে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে বাকি ২৬টি কেবিন-শয্যাও চালু হয়ে যাবে। তখন আরও বাড়বে উপার্জন। স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছেন, অন্য হাসপাতালেও এ ব্যবস্থা চালু হলে আয়ের রাস্তাটা সংশ্লিষ্ট আরকেএসের জন্যও একই রকম ভাবে চওড়া হয়ে যাবে আখেরে যা খরচ হবে রোগীকল্যাণেই।