সরকারি প্রকল্পে কাটমানি-কমিশন রুখতে সম্প্রতি কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই তৈরি হয়েছে ‘গ্রিভ্যান্স সেল’। এবার রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কর ফাঁকি রুখতেও সচেষ্ট মমতার সরকার। এবার কর ফাঁকি ও অনিয়ম অভিযোগে তিনশোর বেশি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করল ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট (ডিআরআইই)। ইতিমধ্যেই দু’শোর বেশি কোম্পানির ঠিকানায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। এবং এর মধ্যে অধিকাংশ সংস্থার সঙ্গেই ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে এই তদন্তের দেখভাল করা হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের রাজস্ব ফাঁকি রুখতে কেন্দ্রের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং ডিরেক্টরেট অব রেভেনিউ ইনটেলিজেন্সের ধাঁচে ডিআরআইই তৈরি করেছে নবান্ন। চলতি তদন্ত দিয়েই সেই সংস্থা কাজ শুরু করেছে বলে অর্থ দফতর সূত্রে জানা গেছে। বিজেপি সাংসদের আর্থিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ পেতে তড়িঘড়ি লোকলস্করও দেওয়া হয়েছে ডিআরআইই-কে। প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ৬০০টি সংস্থার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়ে। বলা হয়, অধিকাংশ সংস্থার সঙ্গেই অর্জুনের যোগ রয়েছে। সংস্থাগুলির শেয়ারের মোট মূল্য সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু বিজেপি সাংসদেরই ঘোষিত শেয়ারের মূল্য ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
এ হেন অভিযোগ পাওয়ার পরেই এফআইআর দায়ের করে তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তারপরই ডিআরআইই সংস্থাগুলির লেনদেনের ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করে। এবং একটি প্রাথমিক রিপোর্টও নবান্নে জমা দেয়। সূত্রের খবর, প্রথমেই দু’শোর বেশি সংস্থায় হানা দিয়েছেন রাজ্যের করকর্তারা। এর পর প্রায় ২০টি কোম্পানির ডিরেক্টরদের নোটিস পাঠিয়ে শুনানিতে ডাকা হয়। কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিরেক্টরেরা হাজিরাও দিয়েছেন। নবান্নের দাবি, প্রাথমিক ভাবে ৩০৯টি কোম্পানিকে ঘিরে তদন্ত শুরু হয়। সেগুলির মধ্যে ৫৫টি কোম্পানিতে অর্জুন সিংহ, সুনীল সিংহ এবং সুশীল সিংহ নামে তিন ব্যক্তির কেউ না কেউ ডিরেক্টর রয়েছেন বলে হদিস মেলে।
আর বাকি সংস্থাগুলিতে তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলির কোনও অস্তিত্ব নেই। কাগুজে কোম্পানি হিসেবে সেগুলি চালানো হচ্ছে। তাদের ডিরেক্টরদের নাম-ঠিকানাও ভুয়ো বলে জানতে পেরেছে ডিআরআইই। এরপর ওই ৫৫টি সংস্থার লেনদেন ও কারবার নিয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। যেহেতু কোম্পানি আইনে রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না। ভুয়ো কোম্পানির হদিস পেলে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকে চিঠি লিখে তা বাতিল করতে বলতে পারে মাত্র। তাই জিএসটি, ভ্যাট, আবগারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোনও কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে রাজ্য। এবং নোটিস পাঠিয়ে কর ফাঁকির শুনানিতেই ওই ডিরেক্টরদের ডাকা হচ্ছে।