বিশ্বকাপে যদিও ভারত এখনও টেবলের দু’নম্বরে। কিন্তু হার্দিক পাণ্ড্য এবং ঋষভ পন্থ আউট হওয়ার পরে যে রকম বিনা লড়াইয়ে ধোনি-কেদার আত্মসমর্পণ করলেন, তাতে প্রবল প্রতিক্রিয়া হতে বাধ্য। একে তো ইংল্যান্ডের প্রত্যেকটি মাঠে যে প্রবল জনসমর্থন তাঁরা পাচ্ছেন, তা জোরালো ধাক্কা খাবে। দ্বিতীয়ত, বড় রান তাড়া করার ব্যাপারে যে সংশয় ভারতীয় ব্যাটিংকে ঘিরে ছিল, তা থেকেই গেল। সব চেয়ে চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে, ছক্কা মারার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঋষভ পন্থ সবে প্রথম ম্যাচ খেললেন কাল। হার্দিক রোজ রোজ সফল হওয়ার মতো ধারাবাহিকতা এখনও দেখাতে পারেননি। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দল সাড়ে তিনশোর আশেপাশে তুলে দিলে কী করে তাড়া করা যাবে, এই প্রশ্ন থাকছে। ধোনি আর কেদারকে দিয়ে ‘ফিনিশারের’ কাজ আদৌ করা যাবে কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় হয়েছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচ। তার আগে রবিবাসরীয় এজবাস্টনে যদিও শুধু পথভ্রষ্ট নয়, রোগাক্রান্তও দেখাল কোহালির ভারতকে!
রবিবাসরীয় এজবাস্টনে যা দেখা গেল, এই অন্তিম প্রশ্নেরও আগে একটা প্রশ্ন এসে গিয়েছে। প্রত্যেক ওভারে যখন দরকার ১২ বা ১৩ রান করে, তখন তাঁরা খুচরো রান নিয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় হিট হবে কি, চেষ্টাই তো নেই। শেষের আধ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের মতো হওয়ার কথা ছিল। হয়ে দাঁড়াল ফ্লপ ছবি। হয়তো বলা হবে, নেট রানরেট ঠিক রাখতে সাবধানি ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ধোনিরা। কিন্তু পাঁচ উইকেট হাতে নিয়েও এমন ব্যাটিংয়ের যা ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, ক্রিকেট ভক্তদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া কঠিন।
ইংল্যান্ডের ইনিংস দারুণ ভাবে শুরু করার পরেও মহম্মদ শামি যখন ম্যাচে ফেরালেন, তার পরেও মর্গ্যানের দল ছাড়ল না। বেন স্টোকস ৫৪ বলে ৭৯ করে ইংল্যান্ডকে সাত উইকেটে ৩৩৭-এর স্কোরে পৌঁছে দিলেন। স্টোকস এমন একটা শট খেললেন, যা ক্রিকেটে বিপ্লব এনে দিতে বাধ্য। যুজবেন্দ্র চহালকে তিনি মারলেন রিভার্স স্লগ সুইপ। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, সুইচ হিট মারলেন। বল সোজা গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। নিজেদের দেশে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার মতো চাপ এসে পড়েছিল তাঁদের উপরে। প্রাক্তনেরা বলছিলেন, বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সব চেয়ে বড় বিপর্যয় হবে। সে রকম পরিস্থিতিতে দুঃসাহসিক মানসিকতা বের করলেন স্টোকসরা। দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয়ও সাবধানী শুরু করেছিলেন। যশপ্রীত বুমরার ওপেনিং স্পেল দেখে দেখে খেলে দিলেন তাঁরা। কিন্তু যখন গিয়ার তোলার সময় হল, ঠিকই তুললেন।
ধোনি এবং কেদার দু’জনে মিলে ৩১ বল খেললেন। তার মধ্যে ৭টা বলে কোনও রান নেই, কুড়িটা এক রান, তিনটে চার এবং একটা ছয়। ভারত শুধু বিস্ময়কর ব্যাটিং করে ম্যাচই হারল না এজবাস্টনে, লক্ষ লক্ষ ভক্তের হৃদয় থেকেও দূরে সরে গেল। ধোনির ব্যাটিং সব চেয়ে অবাক করার মতো। তিনি দলের সিনিয়র ব্যাটসম্যান। কেদারকে তাঁরই পরিচালনা করার কথা। কিন্তু সাউদাম্পটনের ম্যাচের মতোই নিজে খোলসের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সঙ্গীকেও হাত খুলতে উদ্বুদ্ধ করলেন না।
শেষ ওভারে গিয়ে যখন জেতার জন্য ভারতের ৪৬ রান দরকার, প্রথম বলে ছয় মারলেন ধোনি। কিন্তু তত ক্ষণে দর্শকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি ভেসে আসছে ভারতের দুই ব্যাটসম্যানের দিকে। দ্বিতীয় বলে ধোনি আবার এক রান নিতে অস্বীকার করলেন। এ বার দর্শকদের ক্ষোভ আরও ফেটে পড়ল। রোজ রোজ এই শেষ ওভারের ‘ফিনিশার ফর্মুলা’ যে কাজে দেয় না, বাজারেও যে তা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে, সাউদাম্পটনের পরে এজবাস্টনেও প্রমাণ পাওয়া গেল।