ক্ষমতায় এসে মানুষের জন্য কোনও কাজই করেননি মোদী বরং মানুষের হাল আরও খারাপ হয়েছে তাঁর জন্য৷ কেন্দ্রের সর্বাধিক ভুল পদক্ষেপ এনআরসি-র ফলে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ আত্মহত্যা করেছেন৷ নাগরিকত্ব হারিয়ে বাড়িহারা হওয়ার আশঙ্কায় দিন গুনছেন বহু মানুষ৷কতটা প্রমাণ থাকলে পরে নাগরিক হওয়া যায়? অসমের ফতিমা খাতুন আর নুরুল ইসলামের এখন প্রশ্ন এটাই।
প্রশ্নটা কাগজে কলমে সহজ হলেও উত্তরটা জানা নেই তাঁদের। কারণ তাঁরা বাঙালি। ভাষিক সংখ্যালঘু। ধর্মীয় সংখ্যালঘু তো বটেই। হাতে নানা প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের নাগরিকত্ব প্রশ্নচিহ্নের সামনে। বংশপরম্পরায় অসমের বাসিন্দা হয়েও নিজেরা যে বাংলাদেশি নন সেটা প্রমাণ করতে দোরে দোরে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। আর এই সবটাই হচ্ছে মোদী সরকারের ‘বদান্যতা’য়৷
অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর তাঁরা অাসামে এসেছেন। কিন্তু সরকারি রেকর্ড বলছে, ফতিমা আর নুরুলের পূর্বসূরিদের ১৯৩৫ সালের আগে থেকেই বসবাস অাসামে। নগাঁও জেলার জুরিয়া থানা এলাকার দিঘোলিয়াতি গ্রামের বাসিন্দা এই দম্পতি। নিকট আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ের কারণে ফতিমা ও নুরুলের বংশবৃক্ষ এক। জানা গিয়েছে, ১৯৩৫ সালে তাঁদের ঠাকুর্দার বাবার নামে জমির দলিল রয়েছে। নাগরিকত্ব প্রমাণে এটা একটি বড় নথি।
এছাড়াও ১৯৫১ সালে অসমের প্রথম এনআরসি তালিকায় উভয়ের বাবা–মার নাম ছিল। পরবর্তীতে দুজনেরই নাম ওঠে ভোটার তালিকায়। এমনকী, এনআরসি–র চূড়ান্ত খসড়া তালিকাতেও নাম ছিল এই দম্পতির। কিন্তু ২৬ জুন প্রকাশিত অতিরিক্ত খসড়ায় ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৫ জনের নাম বাদ পড়ে। এই বাদ–পড়াদের দলে পড়ে গেছেন তাঁরা। কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে নগাঁও ফরেনার্স ট্রাইবুনালে ১৫ জুন থেকে মামলা শুরু হয়েছে।
জীবনে কখনও বাংলাদেশে না গেলেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে জেলে ভরার চক্রান্ত চলছে। জাতিগত ক্ষোভ থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে নালিশ জানানো হয় বর্ডার পুলিশের কাছে। সেখান থেকে বর্ডার পুলিশের এসপি অফিস ঘুরে এখন মামলা চলছে নগাঁও ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। গরিব এই মুসলিম দম্পতি এখন ব্যস্ত নিজেদের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে। অসমে ভারতীয় সংখ্যালঘুদের হয়রানির ঘটনা এটি প্রথম নয়। কারগিলে লড়াই করে রাষ্ট্রপতি পদক পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত ফৌজি মহম্মদ সালাউদ্দিনও এই সরকারের চোখে ‘বিদেশি’।
এখানেই শেষ নয়, মধুবালা দাস নামে এক মহিলা ফরেনার্স ট্রাইবুনালে বিদেশি প্রমাণিত হওয়ার আগেই প্রাণ হারান। তাঁর বদলে সেই গ্রামের মধুবালা মণ্ডলকে জেল খাটতে হয়েছে তিন বছর। মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালিদের বাংলাদেশি বানানোর রমরমা কারবার চলছে। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অভয়বাণী দিলেও তাঁদের দলের দিল্লির নেতারা এখন এই এনআরসি বিভীষিকা বাংলায় আনতে তৎপর। অর্থাৎ অসমের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাতেও বাঙালি দমন প্রক্রিয়া চালু করার ফন্দি আঁটছে বিজেপি। আশঙ্কা অসম রাজ্য নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতির।