নজরুল মঞ্চে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকের দিনই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ওদিন তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকারি প্রকল্পে মানুষকে সুবিধা দিতে কোনও প্রকার কাটমানি নেওয়া চলবে না। এবং যাঁরা যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন, তাঁদের তা ফেরত দিতে হবে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কাটমানি রুখতে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কেনাকাটা করতে বিভিন্ন জিনিসের রেট বা দর ঠিক করে দিল পঞ্চায়েত দফতর। বিভিন্ন জেলা থেকে ওই জিনিসের বাজারদর নিয়ে একটি রেট চার্ট তৈরি করে দেওয়া হল।
দফতর ৪০০টি আইটেমের বাজারদর পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট রেট ঠিক করে দিয়েছে। সেই দর অনুযায়ী ১০০ দিনের কাজ সহ পঞ্চায়েত স্তরের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র কিনতে হবে। নিচুতলায় নিজের ইচ্ছামতো কেনাকাটা করা যাবে না। তবে সমস্ত কেনাকাটাই টেন্ডার করে করতে হবে। সেই সঙ্গে কী কেনা হল, তা পঞ্চায়েত দপ্তরের তৈরি করা সফটওয়্যারে উল্লেখ করতে হবে। রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর সেই কেনাকাটার হিসেব খতিয়ে দেখবে। তারপরেই অনুমোদন দেওয়া হবে।
পঞ্চায়েত দফতরের বিভিন্ন কাজ নিয়ে কাটমানির অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ থেকে মুক্ত হতেই পঞ্চায়েত দফতরের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলার অফিসারদের কাছ থেকে ব্লকের বিভিন্ন জিনিসের বাজারদর চাওয়া হয়। জেলা থেকে সেই তালিকা চলে আসে পঞ্চায়েত দফতরে। তারপর ৪০০টি আইটেমের দর ঠিক হয়। তবে এলাকা ভিত্তিতে সেই দরে ফারাক রয়েছে। পঞ্চায়েত দফতরের সচিব তথা কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার এ ব্যাপারে বলেন, আগে নিজেদের মতো করে ম্যানুয়ালি কেনাকাটা করতে পারত গ্রাম পঞ্চায়েত। দর নিয়ে নানা ধরনের কথা উঠত। তাই আমরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা আইটেমের দাম চাই।
তাঁর কথায়, সেই আইটেমের মধ্যে ইট, বালি, সিমেন্ট থেকে গাছের চারা পর্যন্ত রয়েছে। তারপর একটি নির্দিষ্ট রেট করা হয়েছে। তবে টেন্ডার ছাড়া কিছু কেনা যাবে না। সবটাই তুলে দিতে হবে ‘সিকিওর’ সফটওয়্যারে। এই সফটওয়্যারেই বিভিন্ন কাজের এস্টিমেট তুলে ধরতে হবে। প্রসঙ্গত, গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা সাড়ে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত এস্টিমেটের অনুমোদন করেন। সাড়ে চার লক্ষ টাকা থেকে আট লক্ষ টাকা পর্যন্ত কাজের ভেটিং বা অনুমোদন করেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা। তার বেশি টাকার কাজ হলে সেই দায়িত্ব জেলা স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের। সমস্ত কাজই হবে ‘সিকিওর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে।
মুখ্যমন্ত্রী চান, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের কাজ নিয়ে যাতে কোনওরকম কাটমানি বা দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, সে কারণেই পঞ্চায়েত দফতর নানা ধরনের পরিকল্পনা তৈরি করছে। মমতার এই পদক্ষেপকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ দলে শুদ্ধিকরনের যে পন্থা তিনি অবলম্বন করেছেন, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের৷ কারণ দলনেত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই কাটিমানি ফেরত দিতে শুরু করেছেন নেতারা৷