আজ এজবাস্টনে সরফরাজ় আহমেদদের কাছে এটা মরণ-বাঁচন ম্যাচ। বিশ্বকাপে শেষ চারের রাস্তা খোলা রাখতে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে জিততেই হবে পাকিস্তানকে। এবারের বিশ্বকাপে দল নির্বাচন সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুগছে পাকিস্তান। সঠিক কম্বিনেশন বাছতে গিয়েই তাদের ছ’টি ম্যাচ অতিক্রান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো কোনও কিছুই যেন তাদের ঠিকঠাক ক্লিক করছে না। তাই, ক্যারিবিয়ানদের মতোই পাকিস্তানের ছিটকে যাওয়া নিয়েও ফিসফিসানি শুরু হয়ে গিয়েছে।
সরফরাজদের এখন গ্রুপের বাকি তিনটি ম্যাচে জিতলেই চলবে না, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ কী ফল করে, সেদিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে যে মরিয়া লড়াই মেলে ধরতে দেখা গিয়েছে, তা এর আগে দেখা যায়নি। আর তার অন্যতম কারণ হল, সঠিক দল নির্বাচন। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচে পাকিস্তান যে মরিয়া হয়ে লড়াইয়ের চেষ্টা করবে, তা বলার জন্য ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার হয় না।
নিউজ়িল্যান্ড একেবারেই সহজ প্রতিপক্ষ নয়। চলতি বিশ্বকাপে ছ’টির মধ্যে পাঁচটি জিতেছে। একটি ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছে বৃষ্টিতে। তাদের বিরুদ্ধে জেতা কতটা কঠিন? পাক বোলিং কোচ আজ়হার মাহমুদ বলছেন, ‘‘একেবারেই কঠিন নয়।’’ তিনি এমনও ইঙ্গিত করেছেন যে, শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে দেখলেই গুটিয়ে যায় নিউজ়িল্যান্ড। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে আজ়হার বলেন, ‘‘আইসিসি-র প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক বার নিউজ়িল্যান্ড খুব ভাল শুরু করে। কিন্তু প্রতিযোগিতা যত এগোয়, ততই ঘাবড়ে যায় ওরা। কঠিন পরিস্থিতিতে স্নায়ুর চাপ সামলাতে পারে না। ইতিহাস এ রকমই ইঙ্গিত করছে।’’ যোগ করেন, ‘‘যে কোনও দলের সঙ্গেই এমন হতে পারে। নিউজ়িল্যান্ডের খারাপ সময় হয়তো কাল শুরু হতে চলেছে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান হ্যারিস সোহেলকে প্রথম এগারোয় রেখে একটা ফাটকা খেলেছিল পাকিস্তান। আর সেটা ক্লিক করে গিয়েছে। পাকিস্তানের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান শুরুটা ভালো করলেও সেখান থেকে দলের রান টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজটা ঠিকমতো হচ্ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সেই ঘাটতিটা পুষিয়ে দিতে পেরেছে হ্যারিস সোহেল। এবার আসা যাক পাকিস্তানের বোলিংয়ের প্রসঙ্গে। আগের ম্যাচগুলিতে কেন শাদাব খানকে পাক টিম ম্যানেজমেন্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করল না, তা ম্যানেজমেন্টই জানে। অতীতে পাকিস্তান একাধিকবার প্রমাণ করেছে যে রান তাড়া করার চেয়ে আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে বড় রান গড়ে প্রতিপক্ষের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েই বেশি সফল হয়েছে তারা। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টসে জিতলে পাকিস্তান হয়তো সেই পথেই হাঁটবে।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হল অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের দুরন্ত ফর্ম। উইলিয়ামসন যে পর্যায়ের ক্রিকেট উপহার দিচ্ছে, তাতে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বর্তমান যুগের সেরাদের তালিকায় অবশ্যই ওর জায়গা পাওয়া উচিত। উইলিয়মসনই নিউজিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। কালিসের মতোই উইলিয়ামসনও প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ওর সব সময় লক্ষ্য থাকে দলের প্রয়োজনে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাওয়া। কিন্তু, তার জন্য অনেক সময় ওর সাফল্যের বিষয়টি ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর এড়িয়ে যেতে পারে। যা মোটেই কাম্য নয়। দু’টি সেঞ্চুরি সহ যার রানের গড় ১৮৬, এই মহানকীর্তি লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবে, এমনটা তো আর হতে পারে না!