নজরুল মঞ্চে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠকের দিনই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ওদিন তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকারি প্রকল্পে মানুষকে সুবিধা দিতে কোনও প্রকার কাটমানি নেওয়া চলবে না। এবং যাঁরা যাঁরা কাটমানি নিয়েছেন, তাঁদের তা ফেরত দিতে হবে।
মমতার এই পদক্ষেপকে মাস্টারস্ট্রোক হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। কারণ দলে শুদ্ধিকরনের যে পন্থা তিনি অবলম্বন করেছেন, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের৷ কারণ দলনেত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই কাটিমানি ফেরত দিতে শুরু করেছেন নেতারা৷ এবার যেমন দলনেত্রীর নির্দেশ মান্য করে প্রকাশ্যে কাটমানি ফেরত দিলেন সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের কোমা পঞ্চায়েতের খন্যা গ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরতের নির্দেশ দিতেই মঙ্গলবার সকাল থেকে গ্রামে সালিশি সভা বসান স্থানীয়রা। অঞ্চল সভাপতির কাছ থেকে টাকা ফেরতের দাবিতে তাঁর বাড়ি ঘেরাও করেন গ্রামবাসীরা। এরপরই কাটমানি ফেরত দেন ত্রিলোচন মুখোপাধ্যায়৷ তিনি গ্রামের ১৪১ জন মানুষকে ১৬১৭ টাকা করে ফেরত দেন বলে জানা গেছে৷ ত্রিলোচন জানান, ‘গ্রামবাসীদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই টাকা তোলা হয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া হয়নি। তাই আজ সবাইকে ডেকে, সে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হল।’ টাকা ফেরত পেয়েই মমতার নামে জয়ধ্বনি শুরু করেন উচ্ছ্বসিত গ্রামবাসীরা।
প্রসঙ্গত, জনপ্রতিনিধি হোক বা সরকারি কর্মচারী, কাটমানি নিয়ে থানায় অভিযোগ জমা পড়লে আর যে রেহাই নেই, সে কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশেই কাটমানি নিয়ে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কাটমানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে ইতিমধ্যে ৪০৯ ধারা প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ দোষীদের যাবজ্জীবন কারাবাসে পাঠানোর এবং কঠোর শাস্তির নিদানও দিয়েছে নবান্ন।
সোমবার রাজ্যের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিং জানান, কারও বিরুদ্ধে কাটমানির নালিশ জমা পড়লে ৪০৯ ধারায় মামলা হবে। দোষ প্রমাণিত হলে যার সাজা ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাবাস। রাজ্যের সমস্ত পুলিশ সুপারের কাছে এই মর্মে নির্দেশ জারি হয়ে গিয়েছে। জ্ঞানবন্তর কথায়, ‘সরকারি সম্পত্তি ও অর্থ তছরুপের মামলা দায়ের হবে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কাটমানি সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত করা হবে দ্রুত।’