ঠিক যেন টানটান চিত্রনাট্যের থ্রিলার সিনেমা। যেটার শেষ জানে না কেউই। তাই সমাপ্তি অবধি চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকতে হয়। আজকের ভারত বনাম আফগানিস্তান ম্যাচটাও ছিল ঠিক এরকমই। তবে শুধু সমর্থকরা নয়, শেষ অবধি মাটি কামড়ে পড়েছিল ক্রিকেটাররাও। যেন মনোভাব ছিল হারার আগে হারবো না। সেই লড়াইয়ের প্রতিদান আজকের এই জয়।

দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানকে হেলায় হারিয়েছিল যে দল, তাদেরই কিনা আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জিততে কালঘাম ছুটে গেল। এক সময় তো মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়ে অঘটনই ঘটিয়ে দেবে আফগানরা। কিন্তু বুমরাহ, শামির দুরন্ত বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরল ভারত। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে আফগানিস্তানকে অলআউট করে দিলেন শামি। ভারত জিতল মাত্র ১১ রানে।

এ দিন টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কোহলি। কিন্তু শুরুতেই ভারতের জন্য অঘটন। ১ রানের মাথায় মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হন আগের ম্যাচে শতরান করা রোহিত শর্মা। তারপর কোহলি ও রাহুল পার্টনারশিপ গড়েন। রাহুল ধীরে খেললেও বিরাট বেশ দ্রুতগতিতে রান করছিলেন। ৩০ রানের মাথায় মহম্মদ নবির বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হন রাহুল।

অন্যদিকে কোহলি বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি করেন। বিজয় শঙ্করের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়েন বিরাট। শঙ্কর ২৯ করে আউট হন। পার্টনারশিপ তৈরি হলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর উইকেট পড়ছিল ভারতের। ফলে রানের গতি বাড়ছিল না। পিচের অসমান বাউন্সে খেলতে সমস্যায় পড়ছিলেন ব্যাটসম্যানরাও। অন্যদিকে পিচে স্পিনও হচ্ছিল বেশ ভালো। ফলে রশিদ, নবি, মুজিবদের বিরুদ্ধে রান তোলা যাচ্ছিল না।

৬৭ রানের মাথায় নবির বলে কাট মারতে গিয়ে আউট হন বিরাট। তারপর খেলা ধরেন ধোনি ও কেদার যাদব। ধোনি ২৯ করে আউট হন। একদিকে ধরে থাকেন কেদার। হার্দিকও ৭ রান করে আউট হন। কেদার নিজের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। ৫২ করে আউট হন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২২৪ করে ভারত।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন দুই আফগান ওপেনার হাজরাতুল্লাহ জাজাই ও গুলবদিন নইব। অধিনায়ক নইব এ দিন নিজেকে ওপেনে তুলে আনেন। ভারতের দুই পেস বোলার বুমরাহ ও শামিকে খুব দেখে খেলছিলেন তাঁরা। কিন্তু ১০ রানের মাথায় জাজাইকে বোল্ড করে আফগানদের প্রথম ধাক্কা দেন শামি। তারপরে নইব ও রহমত শাহ পার্টনারশিপ গড়েন। ধীরে ধীরে রান করছিলেন তাঁরা।

নইব ২৭ ও রহমত ৩৬ করে আউট হন। শাহিদি ২১ করেন। অন্যদিকে একের পর এক উইকেট পড়লেও একদিকে টিকে ছিলেন অভিজ্ঞ মহম্মদ নবি। সঙ্গী না পেলেও একাই লড়ে যাচ্ছিলেন তিনি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৬ রান। প্রথম বলে চার মেরে নিজের হাফসেঞ্চুরি করেন নবি। মনে হচ্ছিল এবার অঘটনটা ঘটেই যাবে। তখনই জ্বলে উঠলেন শামি। পরপর তিন বলে নবি, আফতাব ও মুজিবকে বোল্ড করেন শামি। ৫২ রান করে আউট হন নবি। নিজের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে দলকেও জেতান এই পেসার। এ দিনের জয়ের ফলে ৫ ম্যাচে ৪টে জয় পেল ভারত। তবে এ দিনের খেলা অনেক শিক্ষা দিয়ে গেল ভারতীয় ব্রিগেডকে। আর আফগান প্লেয়াররাও বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে, আমরাও পারি।
