লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির। গোটা রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তারা। তবে এর পাশাপাশি খোদ দলের অন্দরেই চলছে গোষ্ঠীকোন্দল। হ্যাঁ, বিজেপির ভিতর ও বাহিরে অন্দরে-অন্দরে এখন চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলতা। ঝগড়া ‘আসল’ বিজেপি বনাম ‘বহিরাগত’ বিজেপির।
প্রসঙ্গত, দিল্লীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এখন নীতি, ‘দল ভাঙাও, দল ভাঙাও’। তবে রাজ্যের ‘পুরনো’ বিজেপি সদস্যরা এতে মোটেই স্বস্তি পাচ্ছেন না। সোমবার দিল্লীতে সদস্য বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠক হল। তাতে বঙ্গ ব্রিগেডকে বলা হয়েছে, সদস্য-বৃদ্ধি অভিযান শুরু করুন। দিল্লী টার্গেটও বেঁধে দিয়েছে। রাজ্যে এখন ৪২ লক্ষ সদস্য। আরও ১০ লক্ষ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে ক্ষোভের চাপা সুর দলের অন্দরে। পুরনো বিজেপি কর্মী-সদস্যদের মনে একটা বড় আশঙ্কা জেগে উঠেছে।
তাঁদের মূল বক্তব্য, ‘আমরা এত দিন পড়ে থেকে মার খেয়ে দলটা করেছি। আরও আগে বিজেপি এতটাই দুর্বল ছিল যে উপেক্ষা আর অবহেলা ছাড়া আমরা কিছু পাইনি। একটু একটু করে শক্তি বাড়ার পর আমাদের কপালে জুটেছে মার। অন্য দলের কর্মীরা মারধর করেছেন। পুলিশি নিগ্রহও বাদ যায়নি। এখন শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা ১৮ লোকসভা আসন পেয়েছি। এখন মধু খাওয়ার লোভে অন্য দল থেকে অনেকেই বিজেপিতে আসতে চাইছেন। আর নেতৃত্ব তাঁদের যত আদর করছেন, আমাদের প্রতি অনাদর ততই বাড়ছে।’
এই সব ‘পুরনো’ বিজেপি কর্মীর মনে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে। এবার লোকসভায় অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরার মতো মানুষ বিজেপিতে যোগ দিতে না দিতেই লোকসভার বিজেপির টিকিট পেয়ে গেলেন। এঁরা টিকিট পাবেন, এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। ‘তা হলে আমরা এত দিনে কী করলাম! আমাদের সব পরিশ্রম, নিষ্ঠা জলে গেল!’ দলের বিরুদ্ধে এই অনুযোগই এখন প্রকাশ্যে করছেন বিজেপির পুরনো নেতা-কর্মীরা।
তাঁদের আরও প্রশ্ন, সুদিন দেখে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। দলে রোজই নতুনেরা যোগ দিচ্ছেন। এমনকী রাজ্য অফিসের সামনে মঞ্চ বেঁধেই রাখা হয়েছে। সেই মঞ্চে আজ এ জেলা কাল ও জেলা, আজ এই পঞ্চায়েত তো কাল ওই পুরসভা থেকে বিজেপিতে আসছেন। পুরনো যাঁরা, তাঁরা ভাবছেন, বিধানসভা ভোট আসছে। তখন কী হবে? তখনও কি নতুনদের দাপটে আমরা টিকিট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হব? সবমিলিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরে ‘পুরনো’ বনাম ‘নতুন’দের ‘ঠান্ডা লড়াই’ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।