নির্বাচন কমিশনে কে ৩ জন মনোনীত সদস্য থাকবেন? লোকসভা ভোটের আগে এমন প্রশ্ন তুলেই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার গলদ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কমিশন গঠনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ধাঁচে কলেজিয়াম তৈরির দাবি তুললেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, কলেজিয়ামের মাধ্যমে যদি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হতে পারেন, তাহলে কেন কলেজিয়ামের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা আসবেন না?
প্রসঙ্গত, ভোট চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের বিরুদ্ধে বিরোধীদের আনা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উপেক্ষা করেছিল কমিশন। পরে জানা যায়, তিন সদস্যের কমিশনের একজন ওই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলেও, তাঁর মতামত নথিভুক্তই করা হয়নি। সেই তথ্য সামনে আসতেই মমতা কমিশনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছিলেন। সেই সূত্রেই শুক্রবার কেন্দ্রের সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত নির্বাচন কমিশন গঠনের বিরোধিতার সুর চড়ান তিনি। ইভিএমের বদলে কাগজের ব্যালটে ফেরার দাবির পাশাপাশি কংগ্রেস-সহ সমস্ত বিরোধীদের নিয়ে দিল্লীতে ইভিএমে কারচুপি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
শুধু তাই নয়। নির্বাচনের নামে টাকার খেলা বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় তহবিলের পক্ষে ফের সওয়াল করেন তিনি। নির্বাচনী সংস্কারের দাবি তাঁর বরাবরের। প্রধানত রাষ্ট্রীয় তহবিল বা স্টেট ফান্ডিং নিয়েই সরব হতেন তিনি। মমতার মতে, শুধু টাকার কাছে কেন কলঙ্কিত হতে হবে বিশ্বের এই বৃহত্তম গণতন্ত্রকে। সপ্তদশ লোকসভায় বারে বারে তাঁর দল কমিশনে বিজেপির বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছে। তার বেশিরভাগেই আমল দেয়নি কমিশন। এই নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করেছেন। তাতেও কাজ হয়নি। উল্টে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে একাধিক নির্বাচনী আচরণ বিধিভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ কমিশনে জানালেও তাঁদের ক্লিনচিট দেওয়া হয়।
ঘটনাচক্রে ভোটপর্বের মধ্যেই তিন সদস্যের অন্যতম অশোক লাভাসা দাবি করেন, তিনি দুই নেতাকে ক্লিনচিট দিতে অস্বীকার করেছিলেন। সংখ্যাধিক্যের জোরে কমিশন মোদী ও শাহকে ছাড় দিলেও লাভাসার আপত্তি সংশ্লিষ্ট বৈঠকে নথিভুক্ত করতে আপত্তি জানানো হয়। ফলে, সরকারি রেকর্ড অনুসারে কমিশনের ক্লিনচিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত ছিল। লাভাসার ওই দাবি ঘিরে দেশজুড়ে আলোড়ন পড়লেও ভোটে মোদির বিপুল বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বস্তুত লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গিয়েছিল। গতকাল মমতা সরাসরি সেই প্রসঙ্গ না তুললেও কমিশনের শীর্ষকর্তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই নিশানা করেছেন।
ইভিএম নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, ২০ লক্ষ ইভিএমের খোঁজ নেই। ৩০ শতাংশ মেশিনে গোলমাল ছিল। মেশিন প্রোগ্রামিং করা ছিল বলেই মনে করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘এবারের নির্বাচনে অর্থ ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে ওরা নির্বাচনে জিতেছে।’ তিনি এ-ও বলেন, এত যখন অভিযোগ, তাহলে তার তদন্ত হওয়া দরকার। বিচার বিভাগ ও কমিশন এটা নিয়ে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ করা হোক। দিল্লীতে সব বিরোধী দল মিলে নির্বাচন কমিশনে বিক্ষোভ সংগঠিত করা উচিত বলেই মনে করেন তিনি। মমতার মতে, কমিশন গঠনের মধ্যেই গলদ রয়ে গিয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের গঠনে কলেজিয়াম তৈরি করা উচিত।