বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচেই মাঠে আগুন ঝরিয়েছে ভারত। খুব সহজেই বধ হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচে মাঠে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন যশপ্রীত বুমরা। এই সময়ে বুমরাই যে ভারতের অন্যতম অস্ত্র তা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন সকলেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাউন্সার-বৃষ্টিতে ধস নেমেছিল অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংয়ের টপ অর্ডারে। অস্ট্রেলীয় সহকারী কোচ রিকি পন্টিংয়ের আশঙ্কা ভারতও সেই রণনীতি নিয়েই রবিবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।
পরপর দুটো জয়। তার পরেও নাকি মুখ গোমড়া অস্ট্রেলিয়ার সহকারী কোচের। আসলে ক্যারিবিয়ান জুজু কোনওরকমে সামলে জয় এলেও টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়ে একেবারেই খুশি নন পন্টিং। বরং ভারত ম্যাচের আগে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তিনি। শুক্রবার নটিংহ্যাম থেকে লন্ডনে এল অস্ট্রেলিয়া এবং টিমের টপ অর্ডারের সঙ্গে বসে বাউন্সার খেলার ক্লাস নিলেন দু’বার ক্যাপ্টেন সহ মোট তিনটে বিশ্বকাপ জয়ী টিমের সদস্য পন্টিং।
ভারতের দুই রিস্ট স্পিনারকে কী ভাবে অজি ব্যাটিং সামলাবে, তার জন্য স্পিন পরামর্শদাতা শ্রীধরণ শ্রীরামের অঙ্ক অনুযায়ী আনা হয়েছে দুই ভারতীয় রিস্ট স্পিনার প্রদীপ শাহু এবং কেকে জীভাসকে। কিন্তু স্পিন নয়, পন্টিংকে ভাবাচ্ছে শর্ট বলের সামনে অজি ব্যাটিংয়ের নড়ে যাওয়া। বিশেষ করে উসমান খোয়াজা। গত মাসে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে আন্দ্রে রাসেলের বাউন্সারে হেলমেটে বল লেগেছিল খোয়াজার। বৃহস্পতিবার ট্রেন্ট ব্রিজেও ক্যারিবিয়ান পেসারদের সামনে বিভ্রান্ত লেগেছে খোয়াজাকে। হেলমেটে আবার বলও লেগেছে। তার পরেই কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেট দেওয়া। যা ভাবাচ্ছে পন্টিংকে। অজি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমার নোটবুকে ব্যাপারটা লেখা আছে। আমি জানতে চাই, ব্যাট করার সময় মনের মধ্যে কী হচ্ছে ওর। কেন এইরকম শট খেলতে হচ্ছে?’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেস-ত্রয়ী ওশেন থমাস, শেল্ডন কটরেল ও আন্দ্রে রাসেল মিলে প্রথম পাওয়ারপ্লের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার চার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন। ৩৮-৪ স্কোর থেকেও দলকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন স্টিভ স্মিথ। ২৮৮ রানে দলকে পৌঁছে দেয় স্মিথ, অ্যালেক্স ক্যারি ও নেথান কুল্টার-নাইলের ব্যাট। যদিও সে ম্যাচে ১৫ রানে জেতে অস্ট্রেলিয়া।
তাঁর দলের এই অবস্থা দেখে পন্টিং মনে করেন, কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালের মধ্যে একজনকে বসিয়ে মহম্মদ শামিকে খেলাতে পারেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। সেই সঙ্গে যশপ্রীত বুমরাকে নিয়েই বেশি উদ্বেগ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। শুক্রবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পন্টিং বলেছেন, ‘‘সবাই জানে নতুন বলে বুমরা কতটা ভয়ঙ্কর। আমি নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেও ও শরীর লক্ষ্য করে বল করার চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে বিষাক্ত ইয়র্কারও ধেয়ে আসবে। সব কিছু মিশিয়ে বল করবে ও।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাউন্সার-বৃষ্টির বিরুদ্ধে সব চেয়ে অস্বচ্ছন্দ দেখিয়েছে উসমান খোয়াজা এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। রাসেলের বাউন্সারে ভয় পেয়ে পা বাড়াতে ভয় পাচ্ছিলেন খোয়াজা। ম্যাক্সওয়েল অবশ্য হুক শট মারতে গিয়ে আউট হন। দুই ব্যাটসম্যানের কোথায় অসুবিধা হচ্ছে তা নোটবুকে লিখে রেখেছেন পন্টিং। তাঁর কথায়, ‘‘ওদের সমস্যাটা ধরতে পেরেছি। আমার নোটবুকেও লেখা রয়েছে। এ বার শুধু ওদের এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা বাকি রয়েছে। আমার জানা দরকার, শর্ট বলের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা ওরা আদৌ করছে কি না। সব সময় পরিকল্পনা যে ঠিক হবে তার কোনও অর্থ নেই। ওদের মাথার মধ্যে কী চলছে সেটা জানা খুবই জরুরি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘খোয়াজার সমস্যাটা আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি। তিন নম্বরে নেমে মাথায় আঘাত পেয়েছে ও। তার পরে ছন্দ বজায় রাখা সত্যি কঠিন। কিন্তু বিপক্ষে যখন ১৪০ কিমি/প্রতি ঘণ্টার পেসার বল করছে, তখন এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতেই হবে।’’
ম্যাক্সওয়েলের আউটে সব চেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন পন্টিং। তিনি বলেছেন, ‘‘স্বাভাবিক ভাবে খুব একটা হুক শট নিতে দেখা যায় না ম্যাক্সিকে (ম্যাক্সওয়েল)। কিন্তু দুরন্ত গতির বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য হঠাৎ এ ধরনের অদ্ভুত শট অনেকে নিয়ে ফেলে। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে এটা অনেক বড় শিক্ষা। শর্ট বলের বিরুদ্ধে খেলার উপায় বার করতেই হবে আমাদের।’’ পন্টিংয়ের আশা, ভারতের বিরুদ্ধে আর হয়তো একই ভুল করবে না অস্ট্রেলিয়া। বরং বাউন্সার সামলানোর নতুন উপায় খুঁজে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে গত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
এ বারের অজি টিমের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট, অন্তত পাঁচ জন গতবারের বিশ্বজয়ী টিমে ছিলেন। ক্যাপ্টেন ফিঞ্চ, স্মিথ, ওয়ার্নার, কামিন্স আর স্টার্ক। বিগ ম্যাচ কী করে বের করে নিতে হয়, সেই কেমিস্ট্রি অজানা…