এর আগেও বহুবার তাঁর টুইট বা মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক বিতর্ক। তবে তাতেও দমে যাননি মেঘালয়ের ‘রাজনৈতিক’ রাজ্যপাল তথাগত রায়। তাঁর সাম্প্রতিক একটি টুইটও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। চাপের মুখে যখন পিছু হটেছে কেন্দ্র, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রশ্নে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে তথাগত লেখেন, ‘বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ কিংবা নেতাজির সঙ্গে হিন্দি শেখার কোনও বিরোধ নেই। বাঙালি ছেলেরা হরিয়ানা থেকে কেরল-সর্বত্র ঘর ঝাঁট দেয়। বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করে, যা আগে অকল্পনীয় ছিল।’
অর্থাৎ মেঘালয়ের রাজ্যপালের যুক্তি, বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করতে পারলে, হিন্দি শিখতে আপত্তি কেন? প্রসঙ্গত, দিনকয়েক আগেই কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতির খসড়া পেশ করেছেন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি কমিটির চেয়ারম্যান ও ইসরোর প্রাক্তন প্রধান ডঃ কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়, অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে স্থানীয় ভাষা ও ইংরেজির সঙ্গে হিন্দিও শিখতে হবে পড়ুয়াদের। আর হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে অন্য একটি ভারতীয় ভাষাও পড়াতে হবে।
এরপরই শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি তো বটেই, এভাবে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধীতায় নামে এ রাজ্যের সরকারও। শেষপর্যন্ত চাপের মুখে সুর নরম করতে বাধ্য হয় মোদী সরকার। শিক্ষানীতির খসড়া থেকে সরিয়ে ফেলা হয় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেই ফের বেফাঁস মন্তব্য করে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়ালেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল।
স্কুলে হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে একাধিক যুক্তিও দিয়েছেন তথাগত। তাঁর কথায়, ‘তামিলনাড়ু বাদে ভারতের সব জায়গার লোকই মোটামুটি হিন্দি বোঝেন। অপরপক্ষে শহুরে বুদ্ধিজীবী ছাড়া ইংরেজি কেউ বুঝবেন না। যাঁরা ঠিক করেছে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এক পাও ফেলবেন না, তাঁরা ছাড়া বাকিদের বাস্তবটা মেনে নিতে হলে হিন্দি শিখতে হবে। না হলে পস্তাতে হবে।’ এমনকী, বাঙালি মেয়েরা মুম্বইতে বার-ডান্স করতে পারলে, হিন্দি শিখতে আপত্তি কোথায়? ঘুরিয়ে সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, রাজনীতির আঙিনায় রাজ্যপালের পদ সমস্ত দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকার কথা। কিন্তু তথাগত রায়ের ক্ষেত্রে সে কথা বারবারই বদলে গেছে। রাজ্যপালের আসনে বসার পরেও বারবারই বিজেপি নেতাদের মতোই আচরণ করেছেন তিনি। তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলেও হামেশাই দেখা যায় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যঙ্গ করে লেখা একাধিক পোস্টকে রিটুইট করতে। কিন্তু বারবার সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ করলেও কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবারও বিজেপি-আরএসএস-এর সুরে সুর মিলিয়ে হিন্দি নিয়ে জোরাল দাবি তুলতে দেখা গেল তাঁকে।