বিজেপির কাজকর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে আরএসএস-ই শেষ কথা। তাদের অঙ্গুলিহেলনেই চলছে রাজ্য বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পরামর্শও সেখানে কাজে লাগে না কোনও। লকেট চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেবশ্রী চৌধুরির মন্ত্রিত্ব লাভ তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
তৃণমূল থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রাজ্য বিজেপির মুখ হয়ে উঠেছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। মাঠে-ময়দানে নেমে লড়াই করেছেন। হয়েছেন বিজেপি মহিলা যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতিও। কর্মী-সমর্থকদের যে কোনও সুবিধা-অসুবিধাতেও তাঁদের পাশে দেখা গিয়েছে লকেটকে।
হুগলী ছিল তৃণমূলের গড়। লোকসভা ভোটে জোড়াফুলের প্রার্থী ছিলেন হেভিওয়েট রত্না দে নাগ। তাঁকে ৭৩,৩৬২ ভোটে হারিয়েছেন লকেট। অন্যদিকে দেবশ্রী চৌধুরি লড়েছেন রায়গঞ্জ কেন্দ্র থেকে। দাড়িভিটের ঘটনার পর ওই এলাকায় মেরুকরণের তাস খেলতে সুবিধাই হয়েছিল বিজেপির। আর লোকসভা ভোটে তারই ফায়দা তুলে রায়গঞ্জ আসনে ৬০, ৫৭৪ আসনে জয় হাসিল করেছেন দেবশ্রী। সেই দিক থেকে দেখলে হুগলীতে লকেটের জয় অনেক খাটুনির ফসল।
স্বাভাবিকভাবেই এমন জয়ের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন লকেটকেই হয়তো মন্ত্রিত্বে দেখা যাবে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরাও। কিন্তু ৩০ মে-র সন্ধ্যায় বুক ভাঙল বঙ্গ গেরুয়া শিবিরের। লকেটকে হঠিয়ে দেবশ্রীকে দেওয়া হল মন্ত্রিত্বের ভার। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠতাই কি লকেটের বদলে দেবশ্রীকে দিল মন্ত্রীত্বের কুর্সি?
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আরএসএস ঘনিষ্ঠতাই দেবশ্রীর প্লাস পয়েন্ট। দেবশ্রীর বাবা দেবীদাস চৌধুরি ছিলেন অবিভক্ত দিনাজপুরের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক। দেবশ্রীও স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সময়েই এবিভিপিতে যোগ দেন। চার ভাই-বোনের প্রত্যেকেই সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। সেই পরম্পরাই দেবশ্রী বহন করেছেন। ক্রমশ তিনি আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সঙ্ঘের।
এই সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠতাই দেবশ্রী চৌধুরিকে এনে দিল মন্ত্রিত্বের কুর্সি। পেলেন মোদী সরকারের শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর পদ। আর সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠতা না থাকার কারণেই মন্ত্রিত্বের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেন লকেট। থেকে গেলেন জয়ী সাংসদ হিসাবেই।
দক্ষ কর্মী এবং সংগঠক হওয়া স্বত্বেও, বিপুল ভোটে জিতে আসা স্বত্বেও, লকেটের ভাগ্যে মন্ত্রিত্বের শিকে ছিঁড়ল না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, যতই দক্ষ সংগঠক এবং মেধাবী কর্মী হওনা কেন, আরএসএস ঘনিষ্ঠতা না থাকলে বিজেপিতে বিশেষ কিছু করে ওঠা যাবে না। মন্ত্রিত্বের দৌড়ে এভাবে লকেটকে হঠিয়ে দেবশ্রীর উঠে আসাটাই তার হাতেগরম প্রমান।