গত ২৮শে মে ৯টি রাজ্যের ১১টি লোকসভা ও বিধানসভা আসনে হয়েছিল উপনির্বাচন। আজ ভোটবাক্স খুলতেই সকাল থেকে দেশের বিরোধী দলগুলির মুখে চওড়া হাসি। মোদী-শাহ জুটির ‘ভিকট্রি ল্যাপ’ ম্রিয়মান। ২০১৪ সালে বিজেপির যে জয়রথ দেশকে বিরোধীশূন্য করতে গুজরাট থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, মুখ থুবড়ে পড়ল আজকের এই ফলাফলের পর। ঠিক যেন কর্ণবধের আগে মাটিতে চাকা গেঁথে যাওয়ার মত। কৌরবরূপী এই সরকারের পতন কি তবে আসন্ন?
উত্তর প্রদেশে ২০১৬ সালে বিজেপির অপ্রত্যাশিত জয়লাভ ও নীতিশ কুমারের আচমকা ভোলবদলের পর অনেকেই মোদীর বিজেপিকে ২০১৯শের ভবিতব্য মেনে নিয়েছিলেন। ভারত-ভাগ্যবিধাতা, দেশের জনতার সুপ্ত অভিলাষ সমক্ষে এল এই উপনির্বাচনে দেশের বর্তমান দণ্ডমুণ্ডের কর্তার ভরাডুবির বার্তা নিয়ে। মোদীর সূর্য যে অস্তমিত, আভাস মিলতে শুরু করেছে। উলটপূরাণের সোপান সেই উত্তর প্রদেশেই – গোরক্ষপুর ও ফুলপুরে সংসদীয় উপনির্বাচনে।
গোরক্ষপুরের সাংসদ ও উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কস্মিনকালেও কল্পনা করতে পারেননি যে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি পাঁচ-পাঁচবার নির্বাচিত হয়েছেন, সেখানেই বিজেপির শেষের শুরুর অধ্যায় আরম্ভ হবে। এই অসাধ্য সাধন করল কে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আবার কে? না তিনি নির্বাচনে লড়েননি। তৃণমূল সেখানে প্রচারও করে নি। তবে?
আসলে উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই দেশ জুড়ে রটনা করা হচ্ছিল মোদী অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু সেটা যে সত্যি নয়, সেটা অনুধাবন করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই। প্রাপ্ত ভোটের হিসেবে থেকেই বোঝা যায় যে বেশিরভাগ আসনে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির মধ্যে বিজেপি-বিরোধী ভোটটা ভাগ হওয়ার ফসল ভোটবাক্সে তোলে বিজেপি। সেই থেকেই মমতার অমোঘ ফর্মুলা – একের বিরুদ্ধে এক।
কি এই ফর্মুলা? না, যে রাজ্যে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, সেখানে তারাই বিজেপির প্রতিপক্ষ হবে। যেমন, বাংলায় তৃণমূল, বিহারে আরজেডি, অন্ধ্র প্রদেশে তেলুগু দেশম পার্টি, তেলেঙ্গানায় টিআরএস অথবা তামিল নাডুতে ডিএমকে। যে রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী সেখানে লড়বে তারাই। যেমন, গুজরাট, রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ কিংবা ছত্তিসগড়। আর যেখানে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ার দরুন বিজেপির সুবিধা হতে পারে সেখানে চাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই। যেমন, কর্ণাটক ও উত্তর প্রদেশ।
২০১৪ সালে বিজেপির ২৮২ আসনের মধ্যে অধিকতম আসনই ছিল উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলি থেকে। চার বছরের অপশাসন, মূল্যবৃদ্ধি, জুমলা, নোটবন্দি-জিএসটির বাণে বিদ্ধ জনতা যে বিজেপির বিরুদ্ধে রায় দেবে, তার আভাস পাওয়া গেছে উপনির্বাচনগুলির ফল থেকে। উত্তর-পূর্ব ভারতের দৌলতে বিজেপি যদি কিছুটা ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতেও পারে, দক্ষিণ ভারতে তাদের পক্ষে খাতা খোলাটা মুশকিল। মধ্য ও পশ্চিম ভারতেও জনমত যে বিজেপির পক্ষে যাবে না, বলাইবাহুল্য। এমতাবস্থায়, বিরোধী ঐক্যই হতে পারে মোদীর কাল।
দিল্লীর মসনদ যে টলমল, ভালো করেই জানেন ৭, লোককল্যাণ মার্গের নিবাসী। তাই তো, বাংলা দখলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে গেরুয়াবাহিনী। মহেশতলার ফল থেকে স্পষ্ট, তাদের এই তর্জন গর্জন সার। রশিতে টান পড়েছে, দড়ি ধরে টান মারা অপেক্ষা মাত্র। ২০১৯শে মোদী খান খান হচ্ছেই।