সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে ফের দেশ জুড়ে উঠেছে গেরুয়া ঝড়। আর এই ঝড়ে বাংলার বুক থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বামেরা। হবে নাই বা কেন! বামেদের ভোট সবটা গিয়ে পড়েছে বিজেপিতে। শুধু তাই নয়, গতকাল খোদ সিপিএমের বিধায়ক চলে গেলেন বিজেপি–তে। প্রশ্ন উঠছে ঠিক কিসের লোভে রামের শরণাপন্ন হলেন বাম বিধায়ক? না! উত্তর নেই, বরং এই প্রশ্নে অস্বস্তি বাড়ছে সিপিএমের।
গতকাল হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায় যোগ দিলেন বিজেপিতে। সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৭৯,৫৬২, সিপিএম ১৯,২৪৮। বিজেপি ভোট পেয়েছে ৮৫,৭৩৮। এলাকার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিজেপি–উন্মাদনা বাড়তে থাকায় অনেক সিপিএম কর্মী–সমর্থক লোকসভাতেই গোপনে বিজেপিপন্থী হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, সিপিএমের মুখোশ খুলতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে বিজেপি–র সঙ্গে এদের সম্পর্কের আরও অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।
যে বামেরা বুক চওড়া করে বলছেন, বিজেপি–র প্রকৃত বিরোধী তাঁরাই, সেই বামেদেরই বিধায়ক অনায়াসে বিজেপি–তে যোগ দেওয়ায় গোটা উত্তর দিনাজপুর তো বটেই, গোটা বাংলা জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কী এমন কারণ যে, তৃণমূল জমানায় ৭ বছর কঠিন লড়াই করার পর বিজেপি মাথাচাড়া দিতেই সেখানে গা ভাসিয়ে দিলেন হেমতাবাদের সিপিএম বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়? উত্তর দিনাজপুর জেলা সিপিএম সম্পাদক অপূর্ব পাল নিজেও কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায়।
তিনি আশঙ্কা করছেন, লোভের ফাঁদে পা দিতে পারেন।উল্লেখ্য, উত্তর দিনাজপুর জেলার হেমতাবাদ বিধানসভা বামেদের দুর্গ। দেবেন্দ্রনাথের আগে এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন খগেন সিংহ। তিনি জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভাতেও ছিলেন। তখন থেকেই বামেদের দখলে মুসলিম ও রাজবংশী অধ্যুষিত এই এলাকা। তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত এই বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৬ সালেও সিপিএম থেকে জয়ী হন দেবেন্দ্র। তার আগে তিনি বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে ছিলেন। এমন একটি এলাকার বিধায়ক বিজেপি–তে যাওয়া মানে বাম দুর্গ ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া।
দেবেন্দ্রনাথের দলবদলে গোটা জেলায় আর কোনও সিপিএম বিধায়ক রইলেন না। এখন বামেদের অস্তিত্ব বলতে চাকুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক আলি ইমরান রমজ ভিক্টর। স্বাভাবিকভাবেই সিপিএম নেতারা চূড়ান্ত হতাশ। জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল থেকে জেলা কমিটির ভারতেন্দু চৌধুরি, সকলেই হতবাক। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কোনও উত্তর নেই তাঁদের কাছে।