গত রবিবার, ১৯ মে শেষ হয়েছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। আগামীকাল, ২৩ মে সকাল ৮টা থেকে শুরু ভোটগণনা। বেলা ১২টার মধ্যেই ফলের আভাস পাওয়া যাবে। প্রতিটি গণনা কেন্দ্র ঘিরেই ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। থাকবে ত্রিস্তর নিরাপত্তা। ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটের গণনায় ফারাক হলে, ভিভিপ্যাটের ফলই চূড়ান্ত ধরা হবে বলে জানা গেছে। তবে ইভিএম কারচুপি যে হতে পারে, সে আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ-ও বলেছেন, হাজার হাজার ইভিএম কারচুপি করে বিজেপি জিততে চাইছে। তাই এবার অতি সতর্ক হতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দলের নেতারা যেখানে কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, সেখানে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, স্ট্রংরুমের সামনে রাতপাহারায় থাকতে হবে কর্মীদের। তার কারণ, যে কোনও সময় ইভিএম পাল্টে দেওয়া হতে পারে। মঙ্গলবার থেকে স্ট্রংরুমের সামনে পালা করে পাহারা দিচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। স্ট্রংরুমের সামনে কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। তাই ধারেকাছে তাঁরা যাচ্ছেন না। তবে দূর থেকেই নজর রাখছেন। উল্লেখ্য, আগামীকাল গণনাকেন্দ্রে একেকটি টেবিলে একজন করে দলের এজেন্ট থাকবেন। এ ছাড়া সেই হলে দলের পক্ষ থেকে এআরও নিযুক্ত করা হয়েছে। তাঁর কাজ হবে, প্রতি টেবিল থেকে গণনার ফলাফল নিয়ে দলকে জানানো।
সাধারণত গণনার সময় যিনি প্রথম এজেন্ট হয়ে ঢোকেন, তাঁকেই শেষ পর্যন্ত থাকতে হয়। এবার যদি কোনওভাবে রাত হয়ে যায়, তাহলেও সেই এজেন্টকেই থাকতে হবে। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে ধরে বিধায়করা কাউন্টিং এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এজেন্টদের কতগুলি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও প্ররোচনায় তাঁরা যেন পা না দেন। বিজেপি নানা গুজব রটাতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেহালার কাউন্টিং এজেন্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি মঙ্গলবার সন্ধের পর ভবানীপুরে নিজের পার্টি অফিসে কাউন্টিং এজেন্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।
এছাড়াও মেয়র ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, আরেক মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধের পর নিজেদের এলাকায় এজেন্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যাদবপুরে ভোটের দায়িত্বে রয়েছেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি সারা দিনই এই কাজে ব্যস্ত ছিলেন। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিজেপি গণনাকেন্দ্রের সামনে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। দলের কোনও কর্মী যেন টেবিল ছেড়ে না ওঠেন। কমিশন যে সব নির্দেশ দিয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে।
অন্যদিকে, কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল সব মিলিয়ে ১৫৫ জন পর্যবেক্ষক থাকছেন। ১৪৭ জন থাকবেন ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য, ৮ জন বিধানসভার উপনির্বাচনের জন্য। কলকাতা দক্ষিণ ও ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা হবে। জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ ও বালুরঘাট কেন্দ্রে ১০ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা হবে। ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য ৫৮টি গণনা কেন্দ্র থাকছে। বিধানসভা কেন্দ্র ২৯৪টি। মোট বুথ ছিল ৭৮,৭৯৯। গণনা কেন্দ্রে মোট হলের সংখ্যা ৩৭৯। কাউন্টিং টেবিল থাকছে ৪,৬৬৮টি। গণনা কেন্দ্রের ভেতরে সিসি টিভি ও ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা থাকছে।
যে ৬টি বিধানসভার উপনির্বাচন হয়ে গেল তাতে সর্বোচ্চ ২৪ রাউন্ড ও সর্বনিম্ন ১৪ রাউন্ড পর্যন্ত গণনা হবে। ইসলামপুর ও কান্দি বিধানসভায় সর্বোচ্চ ২৪ রাউন্ড গণনা হবে। হবিবপুর ও ভাটপাড়া বিধানসভায় সর্বনিম্ন ১৪ রাউন্ড। এই ৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনার জন্য ১২০টি টেবিল, ৯টি হল থাকছে। বুথ ছিল ১,৪৬৫।
পোস্টাল ব্যালট দিয়ে গণনা শুরু হবে। ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সমিটেড পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম (ইটিবিপিএস)–এর মাধ্যমে সার্ভিস ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। তাও গণনা হবে। ‘কিউআর’ কোড স্ক্যান করা হবে বলেও জানা গেছে।