এ যেন জুতো মেরে গরু দান! দিন কয়েক আগেই যাঁকে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ বলেছিলেন, এবার তাঁকেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে লোক হাসালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ ২১ মে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকীতে টুইট করে তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন মোদী৷ উল্লেখ্য, আইএনএস বিরাটের অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে, নির্বাচনী প্রচারে রাজীব গান্ধীরই কড়া সমালোচনা করেছিলেন মোদী৷ যা নিয়ে চরমে ওঠে রাজনৈতিক তরজা৷ ফলে এদিন নরেন্দ্র মোদীর শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীদের একাংশ৷ তাঁদের মতে, নির্বাচনী প্রচারে যে ভাষায় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন মোদি, এদিনের শোকজ্ঞাপন করে সেই পাপেরই প্রায়শ্চিত্ত৷ আবার মোদীকে ট্রোল করছে নেটিজেনরাও।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশের একটি নির্বাচনী প্রচারসভা থেকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ‘এক নম্বর দুর্নীতিবাজ’ বলে কটাক্ষ করেন মোদী৷ অভিযোগ করেন, ভারতীয় নৌসেনার রণতরী আইএনএস বিরাটে চড়ে সপরিবারে লাক্ষাদ্বীপে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী৷ বফর্স প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে নিশানা করে মোদী বলেন, “আপনার বাবা তাঁর কাছের মানুষদের জন্য ‘মিস্টার ক্লিন’ হতে পারেন। কিন্তু তাঁর জীবন শেষ হয়েছে ‘ভ্রষ্টাচারী নম্বর ওয়ান’ হয়ে।” কিন্তু মোদীর এই দাবি উড়িয়ে দেন তৎকালীন নৌসেনার একাধিক শীর্ষ আধিকারিক৷
মোদীর অস্বস্তি বাড়িয়ে প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল এল রামদাস জানান, গান্ধী পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কোনও যুদ্ধজাহাজ পাঠায়নি নৌসেনা। ছুটি কাটাতে নয়, ১৯৮৭-এর ডিসেম্বর মাসে আইএনএস বিরাটে চড়ে লাক্ষাদ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী৷ এই বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, আইএনএস বিরাটের তৎকালীন ক্যাপ্টেন এবং কম্যান্ডিং অফিসার অ্যাডমিরাল পসরিচা, আইএনএস বিরাটের সঙ্গী আইএনএস বিন্ধগিরির দায়িত্বে থাকা অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ এবং আইএনএস গঙ্গার কম্যান্ডিং অফিসার ভাইস অ্যাডমিরাল মদনজিৎ সিংয়ের বক্তব্য।
এমনকী, নরেন্দ্র মোদির এই অভিযোগ খারিজ করে দেন লাক্ষাদ্বীপের তৎকালীন প্রশাসক ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ। তিনিও বলেন, ‘সেসময় রাজীব গান্ধী পারিবারিক ছুটি কাটাতে লাক্ষাদ্বীপে আসেননি। বরং তিনি এসেছিলেন সরকারি কাজে। তবে, তাঁর সঙ্গে স্ত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিলেন।’ হাবিবুল্লাহ-র দাবি, ‘আইএনএস বিরাটকেও ছুটি কাটাতে ব্যবহার করেননি রাজীব গান্ধী। বরং, যুদ্ধজাহাজটি রাখা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য। যে কোনও প্রধানমন্ত্রীরই এই অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রয়োজন হয়। আর জলপথে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে হলে যুদ্ধজাহাজ ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।’
উল্লেখ্য, রাজীব গান্ধীকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলায়, মোদীর সমালোচনায় মুখ খুলেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। তাঁর উদ্দেশ্যে এমন ভাষা প্রয়োগের তীব্র নিন্দা করছি।’ নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে মমতা লেখেন, ‘নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলাম। তাই বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি হয়ে গেল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উদ্দেশ্যে এক্সপায়ারি প্রধানমন্ত্রী মোদীর মন্তব্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন রাজীবজি। মাতৃভূমির জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতি এমন ভাষার প্রয়োগ এবং এই ধরনের মন্তব্য করার আস্পর্ধার তীব্র নিন্দা করি।’