বুথ ফেরত সমীক্ষা বিজেপি ও শরিকদের যা আসন দিয়েছে, রাজ্য ধরে ধরে বিরোধীদের হিসেব তার থেকে ঢের কম। আর সে কারণেই বিরোধী দলের নেতারা মনে করছেন এনডিএ-র শরিকদের নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে থাকবে বিজেপি। কেন্দ্রে নতুন সরকার গড়ার জন্য আঞ্চলিক দলগুলির হাতেই থাকবে আসল চাবিকাঠি।
গত দু’দিন দফায় দফায় রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, শরদ পাওয়ার, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, মায়াবতী-অখিলেশের সঙ্গে দেখা করার পরে চন্দ্রবাবু নায়ডু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। সামগ্রিক হিসেব কষে তাঁরা একমত যে, এনডিএ-র আসন সংখ্যা কোনও ভাবেই ২২০টির বেশি হচ্ছে না। অর্থাৎ, এনডিএ এই সংখ্যা পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে গেলে বিজেপিকে আরও অন্তত ৫২ জন সাংসদের সমর্থন জোগাড় করতে হবে। সূত্রের খবর, মমতা চন্দ্রবাবুকে জানান সমীক্ষায় বাংলায় তৃণমূলের যে ফল দেখানো হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু দেশমের যে ফল দেখানো হয়েছে তা নিয়েও একই মত নায়ডুর।
অখিলেশের সঙ্গেও ফোনে কথা হয়েছে মমতার। সূত্রের খবর, অখিলেশ তাঁকে জানিয়েছেন যে উত্তরপ্রদেশে এসপি-বিএসপি জোট কোনও অবস্থাতেই ৫০টি আসনের কম পাচ্ছে না। মায়াবতীর সঙ্গে আসন ধরে ধরে পর্যালোচনা করেছেন। উভয়েরই মত তাই। যার ফলে গোবলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যে বিজেপির আসন সংখ্যা নেমে যাবে ত্রিশের নীচে। যদি তাই হয় তা হলে কোনও অবস্থাতেই কেন্দ্রে সরকার গড়ার মতো অবস্থায় আসতে পারবে না বিজেপি। মমতাকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথও জানিয়েছেন, তাঁর রাজ্যে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলের সঙ্গে প্রকৃত ফল একেবারেই মিলবে না।
প্রকৃত ফলের সময়ে যাতে বিরোধী জোটে কোনও গরমিল না হয় সেই জন্য আজ মঙ্গলবার ২১টি বিরোধী দল একযোগে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে। দিল্লীতে কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, ‘বিরোধীদের এই জোটটি অটুট রাখা জরুরি। আমরা তো খবর পাচ্ছি, অমিত শাহ নবীন পট্টনায়ককে ফোন করেছেন। কে চন্দ্রশেখর রাও, জগন্মোহনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন।’ তাঁর বক্তব্য, ‘ভোটের ফল প্রকাশের আগেই আগামীকাল এনডিএ-র শরিকদের নৈশভোজে ডেকেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ। বিজেপি যদি একার জোরে সরকার গড়া নিয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী হত, তাহলে আগেভাগে এনডিএ-কে সঙ্গে রাখার কিসের এত তাগিদ?’
কংগ্রেস মনে করছে, বৃহস্পতিবার প্রকৃত ফল প্রকাশের পরে বিজেপি যদি সরকার গড়ার কাছাকাছি অবস্থায় পৌঁছে যায় তা হলে নবীন, জগন, কেসিআর-এর মতো অনেকেই তাদের দিকে ভিড়তে পারেন। এমনকি মায়াবতী সম্পর্কেও সংশয় রয়েছে। কারণ, তিনি এখনও নিজের তাসটি পুরোপুরি খেলতে চাইছেন না। চন্দ্রবাবুর মধ্যস্থতায় মায়াবতীর দিল্লী আসার কথা ছিল। কিন্তু গত কালের বুথফেরত সমীক্ষার পরে মায়া এখন ভোটের ফল দেখেই আসতে চান। কিন্তু বিরোধী শিবিরের বাকি দলকে কংগ্রেস এখন বোঝাচ্ছে, বিজেপির সঙ্গে গেলে প্রধানমন্ত্রী কিংবা উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ আর কোনও দল পাবে না। বিরোধীদের জোটেই একমাত্র সেটি সম্ভব। যেমন মায়াবতী নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখতে চান। কেসিআরও উপপ্রধানমন্ত্রী পদ পেতে চাইছেন। আবার কংগ্রেস যদি দেড়শোর মতো আসন পেয়ে যায়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হবে।
এমন সব সম্ভাবনা নিয়েই এখন কাটাছেঁড়া চলছে বিরোধী শিবিরে। লক্ষ্য একটাই, মোদী-শাহ জুটিকে ফের ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া।