দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে ৬ দফা। লোকসভা ভোটের বাকি আর মাত্র এক দফার ভোটগ্রহণ। তার পরেই ভোটের ফল এবং নতুন সরকার গঠনের সমীকরণ শুরু। তার আগেই এবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা করল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কলকাতায় অমিত শাহের রোড শোয়ে হাঙ্গামা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার জন্য কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব আজ নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের নীতির দিকেই আঙুল তুলেছেন।
প্রথমে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল, তার পরে দলের প্রধান মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা, এর পরে এআইসিসির মঞ্চ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বিজেপির নিন্দায় মুখর হন। কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী-শাহ শুধু মুখেই কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার কথা বলেন। কিন্তু মোদী সরকারের নীতি হল যুক্তরাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ।
রাতে পরপর দু’টি টুইট করেন সুরজেওয়ালা। প্রথমটির বক্তব্য, গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি এক কালো দিন। বাংলায় কমিশনের সিদ্ধান্তে সংবিধানের ১৪ ও ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত হয়েছে। ৩২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা বলা রয়েছে, সেই দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হয়েছে কমিশন। ক্ষমার অযোগ্য ভাবে সংবিধানকে প্রতারণা করা হয়েছে।
তাঁর দ্বিতীয় টুইটে আক্রমণের সুর আরও চড়িয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অমিত শাহের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে— কিছু করা হয়নি। বিজেপির হিংসা ও অমিত শাহের হুমকি— কিছু করা হয়নি। এ বার মোদীর ১৬ তারিখের সভার অনুমতি দিয়ে বাকি সকলকে আটকানো হল। একদা স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থাটির লজ্জাকর পতন।’
প্রসঙ্গত, বাংলাকে বিজেপি যেভাবে নিশানা করছে, যেভাবে বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে, তাতে তৃণমূল প্রতিবাদ করলেও কংগ্রেস বা অন্য দলকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের অসন্তোষ ছিল। এবার সেই ক্ষোভ নিরসন করতেই এগিয়ে এল কংগ্রেস।
বিদ্যাসাগরের মতো ‘জাতীয় আইকন’-এর মূর্তি ভাঙার নিন্দা করে মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘মোদী সরকার এই ধরনের সব রকম সাংস্কৃতিক পরিচিতির উপর আঘাত করে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে প্রহসনে পরিণত করছে। যে ভাবে এক জন জাতীয় আইকনকে অপমানিত করা হয়েছে, আমরা শীর্ষ স্তর থেকে এর ভর্ৎসনা করছি, কঠোর শব্দে নিন্দা করছি।’
মোদী-শাহ নিয়মিত প্রশ্ন তুলছেন, কেন শুধু বাংলাতেই হিংসা হচ্ছে? এর জবাবে সিঙ্ঘভি পাল্টা অভিযোগ করেন, যেখানেই বিজেপি শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি আসন পেতে পারে, সেখানেই তারা হিংসা বাধানোর চেষ্টা করছে। ঝাড়খণ্ড, হরিয়ানা, বিহারেও হিংসা হয়েছে। কর্ণাটক, কেরলেও এটা করেছে।
তাঁর কথায়, ‘বিজেপি নতুন সংস্কৃতির আমদানি করেছে— জঙ্গল-রাজ, ভিড়তন্ত্র। পরিকল্পিত ভাবে এতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমরা সরাসরি অভিযোগ করছি যে এর জন্য একশো শতাংশ দায়ী মোদী-শাহ জুটি ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’
আর আহমেদ প্যাটেল বিজেপির নিন্দায় বলেন, ‘আমরা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার নিন্দা করছি। বাংলার মানুষ এই অপমান ক্ষমা করবে না। ক্ষমতার লোভে বিজেপি বাংলার সমস্ত আইকন, তাঁদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নষ্ট করছে।’