হাবেভাবে সব সময়ই তিনি ‘বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই’। কখনও তিনি দীর্ঘ ভাষণ রাখতে গিয়ে খাঁড়া করেন ‘মেঘনাদ তত্ত্ব’, কখনও আবার জানিয়ে দেন যে, তিনিই ভারতে সর্বপ্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করেছিলেন। এবং সেটা সেই ১৯৮৮ সালে। যেখানে কোডাক-এর ডিজিটাল ক্যামেরা প্রথম চালুই হয়েছে ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে। তবে এখানেই শেষ নয়, এর আগেও নিজের ‘পাণ্ডিত্য’ জাহির করতে বা নিজের সাফল্যের গল্প শোনাতে গিয়ে ভুল তথ্য দিয়ে লোক হাসিয়েছেন মোদী।
যেমন আমেরিকা সফরে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, কোনারকের সূর্য মন্দির নাকি ২ হাজার বছরের পুরনো! ঘটনাচক্রে মন্দিরটি অত প্রাচীনও নয়। ৭০০ বছর আগে তৈরি। আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ২০১৩ সালে পাটনার এক জনসভায় বিহারের ঐতিহ্যের কথা বলতে গিয়ে সম্রাট অশোক, পাটলিপুত্র, নালন্দার সঙ্গে তক্ষশিলারও নাম নিয়েছিলেন। যেখানে তক্ষশিলা কোনও কালেই বিহারের অংশ ছিল না। ছিল অভিবক্ত পাঞ্জাবে। দেশভাগের পর তা পাকিস্তানের অংশে পড়ে।
আবার তারও আগে ২০০৩-এর জুলাই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আমেদাবাদের এক সভায় মোদী বলেছিলেন স্বাধীনতার পর এক টাকা এক ডলারের সমান ছিল। কিন্তু ঘটনা হল, ওই সময়ে এক টাকার সমান ছিল ৩০ সেন্ট৷ টাকা ছিল ব্রিটিশ মুদ্রা এক পাউন্ডের সমান। ওই বছরই অক্টোবরে তিনি বলেছিলেন, ১৯১৯ সালে আমেদাবাদের পুরসভায় মহিলাদের সংরক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। কিন্তু প্যাটেল সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন ১৯২৬-এ।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি এ কথাও বলেছিলেন, স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী দিল্লীর লাল দরজা থেকে ভাষণ দেন৷ তিনি আসলে লালকেল্লা বলতে গিয়েই ভুলে লাল দরজা বলে ফেলেছিলেন! এখানেই শেষ নয়। ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে মেরঠে মোদী হাস্যকর মন্তব্য করেছিলেন, স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ লঘু করে দেখেছিল কংগ্রেস। স্বাধীনতার প্রথম লড়াই বা সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছিল ১৮৫৭-এ। যেখানে কংগ্রেস স্থাপিতই হয় ১৮৮৫ সালে। ওই যুদ্ধে কংগ্রেসের ভূমিকা না থাকারই কথা।
আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই এক জনসভায় স্বয়ং জাতির জনকের নাম গুলিয়ে ফেলেছিলেন মোদী। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর পরিবর্তে বলে ফেলেছিলেন, মোহনলাল। ২০১৩ সালে একবার জনসঙ্ঘ প্রতিষ্ঠাতার তথ্যও ভুলেছিলেন তিনি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গুজরাটের ভূমিপক্ষ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, উনিই লন্ডনে ইন্ডিয়া হাউস প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ১৯৩০-এ। ওটা আসলে শ্যামকৃষ্ণ বর্মার তথ্য ছিল। ভাষণবাজির সময়ে নিজের পাণ্ডিত্য দেখাতে গিয়ে বারংবারই এমন কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছেন মোদী। যা নিয়ে একাধিকবার সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের হাতে ট্রোলডও হতে হয়েছে তাঁকে।