তিহাড় জেলের প্রায় শ’দেড়েক হিন্দু বন্দী পালন করছেন রোজা। রমজানের পবিত্র মাসে উপবাসী মুসলিম বন্দীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে হিন্দু বন্দীরা এই রোজা রাখেন। সহমর্মিতার প্রায় একই দৃষ্টান্ত দেখা যায় নবরাত্রির সময়ে। নয়দিনব্যাপী ওই হিন্দু উৎসবে হিন্দু বন্দীদের সঙ্গে বহু মুসলিম বন্দি উপবাসে থাকেন। জেলের এক মুখপাত্র জানান, “তিহাড়ের চত্বরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন জেলে ১৬৬৬৫ জন বন্দী রয়েছেন। এঁদের মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু মিলিয়ে ২৬৫৮ জন রোজা রাখছেন। আমরা ওঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছি। গত বারে যত জন হিন্দু বন্দী রোজা রেখেছিলেন, এ বার সেই সংখ্যা তার প্রায় তিনগুণ”।
যে দেশে এক রাজনৈতিক দল তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, ধর্মের নামে মানুষে মানুষে বিভেদ হানে, সেই দেশে তিহাড় জেলের বন্দীরা মানুষ তত্ত্বে বিশ্বাসী। তাঁরা কেবল মুসলিম বন্দীদের সহমর্মিতা জানাতে এই রোজা রেখেছেন। তিহাড়ে এই ট্র্যাডিশন চলে আসছে। তবে এ বার রোজা রাখা হিন্দু বন্দীর সংখ্যা গত বারের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তিহাড়ের বিভিন্ন জেলের বেশির ভাগ হিন্দু বন্দী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের জেল সুপারিনটেনডেন্টদের সঙ্গে দেখা করে রমজান মাসে তাঁদের রোজা রাখার অভিপ্রায় জানান। ঠিক কত জন হিন্দু বন্দী রোজা রাখবেন, তা গুনে দেখেন জেল সুপারিনটেনডেন্টরা।
যাঁরা রোজা রাখছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জেলের তরফে। জেল অফিসার জানান, “ধর্মীয় প্রধানদের জেলে আনার ব্যবস্থা হয়েছে। তাঁরা জেলের আবাসিকদের সঙ্গে প্রার্থনাসভা করছেন। জেল প্রশাসন প্রচুর খেজুর আর রুআফজা মজুত করেছে। কারণ রোজা ভাঙার সাধারণত এগুলো খাওয়া হয়। জেল ক্যান্টিন থেকে এই খেজুর আর রুআফজা কেনা যায়”।
জেল আধিকারিকরা মনে করেন শুধু মাত্র সহমর্মিতা দেখাতেই হিন্দুরা রোজা রাখেন না। জেল আধিকারিকদের ধারণা, “বন্দী হওয়ার পর তাঁরা ধর্মের দিকে ঝুঁকেছেন, এ কথা তাঁরা হয়তো স্বীকার করতে চান না। কিন্তু আমরা দেখেছি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ জেলে এসে ধর্মীয় ভাবাপন্ন হয়ে যান। আসলে মনের শান্তি খুঁজে পাওয়ার একটা বড়ো আশ্রয় হল ধর্মীয় আচার আচরণ। এঁদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক মানুষ বলে ফেলেন, তাঁদের বিশ্বাস ভগবানের কাছে প্রার্থনা করলে তাঁরা তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবেন”। একই ঘটনা দেখা যায় নবরাত্রির সময়। তখন হিন্দু ভাইদের পাশাপাশি বহু মুসলিম বন্দী উপবাসে থাকেন। “এ ঘটনা শুধু তিহাড় জেলেই ঘটে না, দেশের অন্য জেলেও ঘটে”।