ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে রাজনীতির প্রাঙ্গণ জুড়ে শুধুই ধর্মীয় মেরুকরণের বাতাবরণ। উগ্র জাতীয়তাবাদে মজেছে রাজনৈতিক দলগুলি। হিংসা, বিদ্বেষ, পারস্পরিক দোষারোপ যেন এখন মানুষের নিত্যদিনের আচরণ। প্রায়ই দেশের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে খবর আসে ধর্মীয় হানাহানির। ধর্মীয় বিভেদ নিয়ে যখন সারা দেশ উত্তাল তখন শুধু মাত্র জাতি, ধর্ম, বর্ণ, জাতপাতের ঊর্ধ্বে যে কেবল মানবিকতা, আরও এক বার প্রমাণ মিলল আসামে।
রঞ্জন গগৈ নামে এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে রক্ত দিলেন মহম্মদ পানাউল্লা আহমেদ। একজন হিন্দুকে একজন মুসলিম রক্ত দিচ্ছে, এটা কোনও অভিনব ব্যাপার নয়, কিন্তু ঘটনাচক্রে, এই সময়ে রোজা অর্থাৎ রমজানের উপবাস চলছিল পানাউল্লার। ফলে এই অবস্থায় কোনও ভাবেই রক্ত দেওয়া সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। কিন্তু নিষ্ঠাবান ও ধার্মিক মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও, রক্তের প্রয়োজনে সেই রোজা ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগেনি তাঁর। রমজান মাসের শুরুতে, দ্বিতীয় রোজা ভেঙে রঞ্জন গগৈয়ের জন্য রক্ত দান করলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, আপার আসাম ধেমাজি জেলার বাসিন্দা ৫০ বছরের রঞ্জন গগৈ-কে কখনওই চিনতেন না পানাউল্লা। তাঁকে চোখেও দেখেননি তিনি। কেবল সহকর্মীর মুখে, তাঁর পরিচিত রঞ্জন গগৈর অসুস্থতার কথা শুনেই তাঁর প্রাণ বাঁচাতে এগিয়ে আসেন পানাউল্লা। গত বুধবার রোজা ভেঙে এক ইউনিট ও পজিটিভ রক্ত দান করেন তিনি। গুয়াহাটির এক বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত পানাউল্লা। তাঁর সহকর্মী ও রুমমেট তাপস ভাগবতী জানান, তাঁর পরিচিত রঞ্জন গগৈর পেটে দু’টি বিপজ্জনক টিউমার ছিল। সেগুলি অস্ত্রোপচার করার জন্য দু’ইউনিট ও পজিটিভ গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন ছিল। গগৈর পরিবার বহু চেষ্টা করেও তা জোগাড় করতে পারছিলেন না। রোজা ভেঙে পানাউল্লা যে অপরিচিত এক জনের জন্য রক্তদান করতে রাজি হবেন, তা কল্পনাও করেননি তাপস। তিনি বলেন, “পানাউল্লাকে বিষয়টি বলার আগে সকলের কাছ থেকে ‘না’ শুনেছিলাম। পানাউল্লা রাজি হওয়ায় আমি খুব খুশি হই। কিন্তু ওর উপবাস ভাঙুক, তা চাইনি। ও অবশ্য নিজেই জেদ করে, রক্ত সে দেবেই।” রঞ্জন গৈগের পরিবারও পানাউল্লাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
রক্তদানের জন্য রোজা ভাঙায় অবশ্য এতটুকু বিরক্ত নন পানাউল্লা। এমনকী মৌলবিরাও তাঁকে এ কাজে বাধা দেননি বলে জানিয়েছেন পানাউল্লা। তিনি বলেন, “আমি সব শুনে কয়েক জন মৌলবির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করি। সকলেই আমায় রক্ত দিতেই বলেন। সেই সঙ্গে বলেন, ওই দিন যেন রোজা না রাখি আমি।”