‘এক কাপ চা’ দিয়েই বাংলা গানের জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। তিনিই ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ গেয়ে জীবনবিমুখ মানুষকে করে তুলেছিলেন জীবনমুখী। তবে তিনি শুধু গানের জগতেরই লোক নয়। একসময় তিনি ছিলেন যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ। এখন নন। কিন্তু আজও তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি তাঁর অগাধ ভরসার কথা হামেশাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন কবীর সুমন। আর এবার মমতাকে নিয়েই রাগ বাঁধলেন বর্ষীয়ান এই সঙ্গীত শিল্পী। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই সুমন সে রাগের নাম দিয়েছেন ‘মমতা’। নিজের ফেসবুক পোস্টেই এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
কবীর সুমন জানিয়েছেন, প্রখ্যাত বাঁশিবাদক আচার্য পান্নালাল ঘোষের সৃষ্টি রাগ ‘নূপুরধ্বনি’র সঙ্গে শুদ্ধ ধৈবত বা ধা জুড়ে বছর দু’য়েক আগে তিনি একটি রাগ বানিয়েছিলেন। নাম রাখতে চেয়েছিলেন ‘মমতা’। কিন্তু এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় কয়েকজনের পরামর্শে তা রাখেননি তিনি। পরিবর্তে নিজের সৃষ্টি রাগের নাম ‘নববাংলা’ রাখার সিদ্ধান্ত নেন সুমন। তাঁর সৃষ্ট এই রাগ প্রসঙ্গে সুমন বলেন, ‘নববাংলা নামটিতে অনেক কিছু, অনেক মানুষের সঙ্গে মমতাও মিশে আছেন।’ কিন্তু দু’বছর পরে ‘নববাংলা’ রাগের নাম বদলে আগের ভাবনা মতো সেই ‘মমতা’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ‘গানওয়ালা’। শুধু তাই নয়। ‘মমতা’ রাগে নতুন বন্দিশ বানাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল রাতে করা ওই ফেসবুক পোস্টে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় যে উন্নয়নের কাজ চলছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন এই সাংসদ। তাঁর মতে, ‘গত কিছু বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্যের জন্য যে যে কাজ যেভাবে করেছেন তা বিশ্বের অনেক বিপ্লবী সরকারও অনেক সময়ে পেরে ওঠেননি। এত অল্প সময়ে কৌম মানুষের জন্য এত বিচিত্র প্রয়োজনীয় কাজ দুনিয়ার আর কটা দেশে হয়েছে!’ তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ‘মনে রাখতে হবে মমতার হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল না, নেই। আগের বামফ্রন্ট সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ এ রাজ্যের জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে বিদেয় হয়েছেন। সেই হিমালয়-বোঝা সামলে মমতা সরকার উন্নয়নের কাজ করছেন।’
হতাশা প্রকাশ করে সুমন এ-ও বলেন যে, ‘অবাক লাগে তাঁর ভাল কাজগুলি সম্পর্কে একটি ভাল কথা কেউ বলে না। বাম ও রাম মমতার গুষ্টির তুষ্টি করছেন, কিন্তু যে সুবিধেগুলি রাজ্যের আর-সকলের সঙ্গে মমতার বিরোধীরাও পাচ্ছেন সেগুলি সম্পর্কে তাঁরা একটি ভাল কথা বলছেন না…শুধু একটি সাইকেল যে এই রাজ্যের সাধারণ কৌম ঘরের ছেলে মেয়েদের জীবনে কতটা বদল এনেছে…সরকারি হাসপাতালগুলো আজ কেমন দেখতে হয়েছে, সেখানে চিকিৎসা ও রুগীসেবার কাজ কেমন চলছে – একবার দেখে আসুন যে চান…চাষীদের পণ্য বেচার জন্য বিভিন্ন মণ্ডি তৈরি হয়েছে। রেশনে ক’টাকায় ভাল চাল পাচ্ছেন আজ জনগণ? বাম আমলে কী হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্যবস্থাটা? এত কাজ যেখানে হয়েছে ও হচ্ছে সেখানে কিছু ভাল মন্তব্যও কি করা যায় না?’
একইসঙ্গে ওই ফেসবুক পোস্টে রাজ্যের বিগত বাম শাসনের সমালোচনার পাশাপাশি বিজেপিকে ‘হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন সুমন। শুধু তাই নয়, ফের একবার বিজেপির মন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে একহাত নিয়ে তিনি বলেন, “কয়েক দিন আগে এক নেহাতই সাধারণ গাইয়ে, যিনি এখন বিজেপির নেতা, বললেন ‘আপনার মমতাময়ী’। কোনও পাগলও ঐ ভাজপা-গাইয়েকে ডেকে গান শুনতে চাইবে না। এমনিতে কোনওদিন এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়নি। কেউ তাঁকে ভাড়া করবেন না একসঙ্গে। করলে এক ঘরে বসতে দেবে না। এ হেন ভাজপা নেতা বলছেন ‘আপনার মমতাময়ী’।” তাঁর সাফ কথা, ‘মমতা সম্পর্কে আমি ক্রিটিকাল।’